এইচ.এম.এ রাতুল : বিএনপি জামায়াতের ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতালে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি বরিশালে। বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। বরিশাল নগরী বা জেলার কোথাও কোন মিছিল কিংবা পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। অনেকটা ঢিলে-ঢালা ভাবেই পালিত হয়েছে হরতাল। তবে যাত্রী সংকটে আভ্যন্তরীন ও দূরপাল্লার দু’একটি বাস চলাচল করলেও বেশিরভাগ বাস বন্ধ থাকে। আর লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও তেমন একটা যাত্রী ছিল না। অফিস আদালত, স্কুল-কলেজ, ব্যাংক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক নিয়মেই চলে। নগরীর ভেতরে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল ছিল অন্যান্য দিনের মতোই।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে পুলিশ সদস্যদের মোতায়েনের পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়ক ধরে র্যাব-পুলিশের টহল অব্যাহত থাকে। এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা হরতালে নৈরাজ্য প্রতিরোধে বরিশালে শান্তি সমাবেশ ও নেতাকর্মীদের নিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছেন সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল করলেও যাত্রী কম থাকায় নির্দিষ্ট সময়ের বাস কিছুটা বিলম্বে এবং কমিয়ে চলাচল করছে বলে দাবী মালিক সমিতির। যদিও দুপুর ১২টা পর্যন্ত এখান থেকে আভ্যন্তরীন রুটে কিংবা দূরপাল্লার কোন বাস চলাচলের খবর পাওয়া যায়নি, তবে আভ্যন্তরীন ও দূরপাল্লার কাউন্টারগুলো খোলা হয়েছে। কাউন্টার স্টাফরা জানিয়েছেন, যাত্রী কম থাকায় সকালের দিকে বাস চলাচল না করলেও বিকেলের দিকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে দুপুর পর্যন্ত কোন বাস চলাচল না করায় কিছুটা ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা।
অবশ্য স্বাভাবিক নিয়মে রবিবার সকাল থেকে বিআরটিসির বাসগুলো সকল রুটে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করে, যাতে যাত্রীদের উপস্থিতিও ছিলো বেশ ভালো। সেইসাথে নিশির ভেজা সকাল থেকে বরিশাল নগরী ও উপজেলা সদরগুলোতে সিএনজি, মাহিন্দ্রা, অটোরিক্সাসহ সকল ধরণের থ্রি-হুইলার স্বাভাবিক নিয়মে চলাচল করে। এমনকি বরিশাল নগর থেকে উপজেলাগুলোতে সমানে যাত্রী পারাপার করে এসব যানবাহন।
এমএম পরিবহণের কাউন্টার ম্যানেজার মিলন জানান, সকাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়েনি। সকালে প্রায় সব পরিবহনেরই বিক্রিত টিকিট যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, শনিবার রাতে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাস চলাচলের কথা বলা হলেও রবিবার সকালে তাদের দেখা যায়নি।
বিএমএফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার এম.আর নয়ন জানান, সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪টি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। বিকেলের পর থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই বাস ছেড়েছে। তিনি জানান, সড়কে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকায় ছেড়ে যাওয়া বাসে কোন সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে বরিশাল নদী বন্দর থেকে জেলার আভ্যন্তরীন ও জেলার বাহিরের বিভিন্ন রুটে স্বাভাবিক নিয়মে লঞ্চ চলাচল করে। তবে স্বাভাবিক দিনের থেকে যাত্রী কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন বরিশাল থেকে ভোলাগামী সোহাগী-১ লঞ্চের মাষ্টার নয়ন। তিনি বলেন, দূরপাল্লার বাস চলাচল কম থাকায় যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল। তবে অফিস সময়ের সাথে লঞ্চগুলোতে যাত্রী সংখ্যা আগের মতোই ছিলো বলে জানিয়েছেন বন্দরের স্টাফরা। এদিকে নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে আভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার রুটের বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
নথুল্লাবাস কেন্দ্রীয় বাস মালিক গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জগলুল হাওলাদার বলেন, দুপুর পর্যন্ত যাত্রী তেমন একটা ছিল না। আগে যেখানে এক সঙ্গে ৭/৮টি বাস ছেড়ে যেত সেভাবে যায়নি। দুই ঘন্টা পর পর যাত্রী হলে বাস ছাড়ে বলে জানান তিনি।
এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের হরতালে নৈরাজ্য প্রতিরোধে বরিশালে রবিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত নগরীর সদর রোডস্থ সোহেল চত্ত্বরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ করে মহানগর এবং জেলা আওয়ামী লীগ। শান্তি সমাবেশ শেষে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে সোহেল চত্ত্বর থেকে একটি মোটরসাইকেল মহড়া বের হয়। আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে মোটরসাইকেল মহড়াটি নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।