বানারীপাড়া প্রতিনিধি ॥ দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায়ের মেধায় বরিশালের বানারীপাড়ার মারিয়া খানম ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করেও লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহনের দুঃশ্চিন্তা তাকে তাড়া করে ফিরছে।
বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের আলতা গ্রামের প্রয়াত সিএনজি চালক তাহের শরীফের ছোট মেয়ে মারিয়ার জীবনে সংগ্রাম নতুন কিছু নয়। ২০২০ সালে বাবাকে হারানোর পর তাদের পরিবারে উপার্জনের একমাত্র উৎস বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে মারিয়া ও তার দুই ভাইবোন চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের শিক্ষা জীবন অব্যাহত রেখেছেন।
২০১৯ সালে বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন মারিয়া। স্কুলের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সহযোগিতা এবং কর্নেল (অব.) আনোয়ার হোসেন ও তার ভাই দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে প্রাপ্ত ১০ হাজার টাকার বৃত্তি দিয়ে গৌরনদী সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন তিনি। সেখানেও নিজের টিউশনির উপার্জন দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন।
পরিবারের অন্য সদস্যরাও তার লেখাপড়ার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বড় বোন মুনিয়া আক্তার বীথি টিউশনি করে এবং সেলাই মেশিন চালিয়ে আর ছোট ভাই নাঈম শরীফ ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে পরিবারের খরচ জোগানোর পাশাপাশি মারিয়ার পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন।
২০২৩ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে মারিয়া ডুয়েটের ২০২৩-২৪ সেশনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। তবে ভর্তি ফি, বইপুস্তক, আবাসন এবং অন্যান্য খরচের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে না পারায় মারিয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে আরেকটি বড় বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
মারিয়ার মা মাকছুদা বেগম, ভাই নাঈম শরীফ এবং বোন মুনিয়া আক্তার বীথি সবাই তার উচ্চশিক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। তারা চান, মারিয়ার মেধা আর সংগ্রামের গল্পকে কোনোভাবেই হারিয়ে যেতে দেওয়া হবে না।
বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও ভোকেশনাল শিক্ষক সমিতির বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মো. জাকির হোসেন জানান, “মারিয়ার ধারাবাহিক সাফল্যে আমরা সবাই গর্বিত। তবে তার ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবন নিয়ে যে দুশ্চিন্তা তা দূর করার জন্য প্রয়োজন সবার সহযোগিতা।”
মারিয়ার সাফল্য শুধু তার পরিবারের নয়, বরিশালের বানারীপাড়ারও গর্ব। এমন একটি গল্প নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।