নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদের আগে বরিশালে পৃথক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। যারমধ্যে রোববার (১৬ জুন) সকালে বরিশাল মেট্রোপলিটনের এয়ারপোর্ট থানাধীন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও ৮ জন আহত হয়েছে।
রোববার সকাল ৭ টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কাশিপুর ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন কুয়াকাটা-ঢাকা রুটের বেপারী পরিবহনের চালকের সহকারী মো. সোহাগ (১৯) ও কুমিল্লার বাসিন্দা অজ্ঞাত সুপারভাইজার।
অপরদিকে আহত যাত্রীরা হলো- পিরোজপুরের নেছারবাদ উপজেলার উরিবুনিয়া এলাকার মোহাম্মদ ইমন (২১), পটুয়াখালীর খাসেরহাট এলাকার মোহাম্মদ আরিফ (৩০), মহিপুরের মো. একরামুল (২৬), পটুয়াখালীর গলাচিপার মো. সোহাগ (২৫), বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাওকাঠি এলাকার মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (৪০) ও পটুয়াখালীর মহিপুরের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (৪৫), কামাল হাওলাদার (৪০) ও রানা (২৫)। এরা সকলে বেপারী পরিবহনের যাত্রী। তাদের বরিশাল শের-ইবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন জানান, বেপারী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো। বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টার অতিক্রমকালে গ্যাস সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাককে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের সামনের অংশ দুমরে মুচরে যায়। ট্রাকটি মহাসড়কের পাশে পুকুরে পড়ে।
ওসি জানান, ঘটনাস্থলে বাসের চালকের সহকারী নিহত ও যাত্রীরা আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে চালকের সহকারীর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর বাস ও ট্রাকের চালককের সন্ধান পাওয়া যায়নি, তবে সড়ক থেকে দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন সরিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এরআগে ভোররাতে বরিশাল-ঝালকঠি মহাসড়কে বাসের সাথে থ্রি-হুইলারের (সিএনজি) সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন থ্রি-হুইলার চালক ও বরিশাল নগরের কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন (৩৫) ও মঠবাড়িয়ারর বাসিন্দা যাত্রী আলতাফ মুন্সী (৭০)।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরাদ আলী জানান, শনিবার দিনগত রাত পৌনে একটায় উপজেলার শ্রীরামপুর বাজারে সাকুরা পরিবহনের বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজি চালক আল-আমিন ও যাত্রী আলতাফ মুন্সী নিহত হয়েছে।
তিনি জানান, ওই রাতে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম ঘটনাস্থল থেকে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা কবলিত সিএনজি দেখতে পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। ওসি বলেন, পরিবার থেকে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা করা হবে।
নিহত থ্রি হুইলার চালক আল-আমিনের বন্ধু মিঠু জানান, যাত্রী নিয়ে আল আমিন ঝালকাঠি যায়। সেখান থেকে এক বৃদ্ধ যাত্রীকে নিয়ে বরিশাল নগরে ফিরছিলো। শ্রীরামপুর বাজারে পৌছুলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পিরোজপুরগামীপরিবহনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
বরিশাল শেরই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বর ডা. মানসী বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনায় রাত থেকে এখন পর্যন্ত মৃত অবস্থায় তিনজনকে জরুরী বিভাগে নিয়ে এসেছে। এছাড়াও একজন হাসপাতালে আনার পর মারা গেছে। আহতদের হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের মরদেহ হাসপাতালের লাশ রাখা কক্ষে প্রেরণ করা হয়েছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে মরদেহগুলো পাঠানো হবে।
এদিকে শনিবার (১৫ জুন) দুপুর ১টার দিকে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ব্রিজের দুই থ্রি-হুইলারের সংঘর্ষে এক নারী যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহত স্বপ্না বেগম (৫০) মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আন্দারমানিক ইউপির কাদিরাবাদ গ্রামের মো. হারুন অর রশিদের স্ত্রী।
আহত মশিউর রহমানকে (১৮) বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মশিউর বাবুগঞ্জের পাংশা গ্রামের মজিবর রহমান সরদারের ছেলে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি লোকমান হোসেন।
ওসি লোকমান হোসেন জানান, স্বপ্না বেগম স্বামী ও সন্তানের সাথে থ্রি হুইলার অটোরিকশা বাবুগঞ্জের রহমতপুর ব্রিজ এলাকায় আসছিলো। অটোরিকশাটি ব্রিজের আলী মার্কেটের সামনে পৌঁছুলে বাবুগঞ্জের খানপুরাগামী একটি সিএনজির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোর যাত্রী স্বপ্না বেগম মাথায় আঘাত পায়। এছাড়া অপর যাত্রী মশিউর পরে গিয়ে জখম হয়েছে। আহত দুইজনকে উদ্ধার করে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক স্বপ্না বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন।