স্থানীয়রা মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই দুই নেতার মধ্যে থেকেই একজনকে বেছে নিতে পারে বিএনপি।
ডেক্স রিপোর্ট ঃ অন্যান্য আসনের মতো বরিশাল ৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনেও বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তবে মূল আলোচনা হচ্ছে দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজনকে ঘিরে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই দুই নেতার মধ্যে থেকেই একজনকে বেছে নিতে পারে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আবুল হোসেন খানকে ডেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছে দলের হাইকমান্ড।
জাতীয় সংসদের ১২৪ নম্বর আসনটি বাকেরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত, যা বরিশাল ৬ আসন হিসেবে পরিচিত পায়। ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত একটি উপনির্বাচনসহ ১২টি নির্বাচনের মধ্যে বিএনপি পাঁচবার, জাতীয় পার্টি চারবার এবং আওয়ামী লীগ তিনবার জিতেছে। তবে ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকায় বিএনপির সঙ্গে অন্য দুই দলের জয়ের ব্যবধানকে বড় করে দেখছেন দলটির সমর্থকরা।
প্রায় তিন লাখ ভোটারের এই আসনে সাবেক সাংসদ আবুল হোসেন খান এবারও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময়টাই তিনি বরিশালের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নেতৃত্ব দিতে গিয়ে একাধিকবার হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে গত জুলাইয়ে দুই দফা গ্রেপ্তারও হন আবুল হোসেন।
অন্যদিকে, মনোনয়ন যুদ্ধে নামা নজরুল ইসলাম খান রাজন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় পুরো সময়টাই যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের কিছুদিন আগে তিনি দেশে ফেরেন। অভিযোগ রয়েছে, জুলাই আগস্ট বিপ্লবের পর তিনি রাজনীতিতে প্রকাশ্যে আসেন, যে কারণে দলের দুর্দিনের আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এর পরও উপজেলার একটি বড় অংশ নজরুল ইসলাম রাজনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে একবার হামলার শিকার হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম রাজন। সেই সময় অভিমানে তিনি বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সম্প্রতি দেশে ফিরে সেই সরোয়ারের সঙ্গেই তিনি সন্ধি করেছেন। এখন আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে, যা আবুল হোসেনের মনোনয়ন প্রাপ্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই দুই নেতার বাইরেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শহীদ হাসান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য ও থানা বিএনপির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান নান্নু, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ সিকদার এবং সাবেক ছাত্রনেতা ও যুক্তরাষ্ট্র নিউ জার্সি স্টেট বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সোলায়মান সেরনিয়াবাত।
এদিকে, এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম প্রার্থী হতে পারেন। তিনি বরিশাল সদর এবং বরিশাল ৬ উভয় আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর হয়ে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে লড়বেন অধ্যাপক মাওলানা মাহমুদুন্নবী তালুকদার। বিগত সরকারের আমলে ছয়টি মামলার আসামি হয়ে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেছেন।
অপরদিকে, খেলাফত মজলিসের এক অংশ থেকে অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান এবং মামুনুল হক অনুসারী অংশ থেকে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া, নির্বাচনে অংশগ্রহণে আইনি বাধা না থাকলে জাতীয় পার্টি থেকে রুহুল আমিন হাওলাদার ও নাসরিন জাহান রত্না আমিন দম্পতির যেকোনো একজন প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে বাকেরগঞ্জ বাসির।