ডেস্ক রিপোর্ট: গত মে মাস থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকাপ বাড়তে শুরু করে। এরপর জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। এর মধ্যে রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ নানা উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
এ মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরুর চার মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রতিকার ও প্রতিরোধ করার জন্য কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সেই লক্ষ্যে আগামী ৩০-৩১ আগস্ট দুটি সভার আয়োজন করতে বলেছে সংস্থাটি। সেখানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের করণীয় কী হবে তা শেখানো হবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের স্কুল ও নিজ বাসার আঙিনা পরিষ্কার করার পদ্ধতি শেখানো হবে। এসব কার্যক্রম মূল্যায়ন হিসেবে ধার্য হবে এবং নম্বর দেবেন শিক্ষকরা, যা মূল নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে।
বিষয়টিকে হাস্যকর উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ষা প্রায় শেষ। এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ শেষ হয়ে আসবে। শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় শেখাতে শেখাতে শীত চলে আসবে। এ উদ্যোগ আরও তিন মাস আগে কেন নেওয়া হয়নি!
বুধবার (২৩ আগস্ট) মাধ্যমিক পর্যায়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে সচেতনতামূলক একটি চিঠি পাঠিয়েছে মাউশি। চিঠিতে বলা হয়, সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ে একটি প্রকল্পভিত্তিক শিখন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে মাউশি। এ কার্যক্রমে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে।
যেসব ধাপে হবে কার্যক্রম বাস্তবায়ন
কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ৩০-৩১ আগস্ট দুটি সভার আয়োজন করতে হবে। প্রথম সভাটি অঞ্চলের পরিচালক নিজ নিজ অঞ্চলের উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক), জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজারদের সমন্বয়ে হবে। আর দ্বিতীয় সভাটি হবে উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। তারা নিজ নিজ উপজেলা/থানার প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে সভা করবেন। এই সভার কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে হবে এবং করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেওয়া কার্যক্রম বাস্তবায়নে আঞ্চলিক পরিচালক, আঞ্চলিক উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক), জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাগণ স্ব-স্ব অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিতে এবং তা তদারকি করতে হবে।
যেসব নির্দেশনা দেওয়া হবে
এ কার্যক্রমের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। পাশাপাশি তারা এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হবে এবং এর প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা যেমন- যোগাযোগ, সুক্ষচিন্তন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান ও সৃজনশীল দক্ষতা ইত্যাদি অর্জন করবে। ফলে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুর প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম বিষয়ে সচেতন হওয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে এর বিস্তার রোধে বিশেষভাবে ভূমিকা পালনের দক্ষতা অর্জন করবে।
শিক্ষকদের ভূমিকা
৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয় শিক্ষক এবং ৮ম-১০ম শ্রেণিতে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভূমিকা বিষয় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব পালন করবেন। বিষয় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দল গঠন, তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য উপস্থাপন এ বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করবেন। অন্যান্য শিক্ষকরা এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করবেন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করবেন।
এ বিষয়টি সমন্বয় করবেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়া পুরো কার্যক্রম সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করবেন তিনি। প্রতি শ্রেণির ১০ জন শিক্ষার্থীকে এক একটি দলে অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দল গঠন করতে হবে। প্রতি দলের জন্য একজন দলনেতা নির্বাচন করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে দলনেতা পরিবর্তন হবে, ফলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী দলনেতা হওয়ার সুযোগ পাবে। আবার প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের যোগাযোগের সুযোগ হবে।
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উপায়ে ডেঙ্গু সম্পর্কে তাদের ধারণা উপস্থাপন করবে, যেমন: একক কাজ, দলগত কাজের পদ্ধতি কাজ, প্রদর্শন, ভূমিকাভিনয় ও মুক্ত আলোচনা। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে দলগতভাবে তথ্য সংগ্রহ করবে এবং তাদের সংগৃহীত তথ্য উপস্থাপন করবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা ধারাবাহিকভাবে একটি খাতায় প্রকল্প ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ করবে (যেমন) ইন্টারনেট, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি) থেকে ডেঙ্গু রোগ বিষয়ক যেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা
প্রতি সপ্তাহে রোব, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের শেষ পিরিয়ডের শেষ ১৫ মিনিট পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। শেষ ক্লাসের শিক্ষকের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
প্রতি সপ্তাহে শনি, সোম ও বুধবার শিক্ষার্থীরা নিজ বাড়িতে বাড়ির প্রাঙ্গণে সুবিধাজনক সময়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। পরিবারের অভিভাবকের নেতৃত্বে কিংবা অন্যান্য সদস্যদের সহায়তা নিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়নের অংশ হিসেবে এই প্রকল্পভিত্তিক কাজটি মূল্যায়ন করা হবে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৪র্থ অধ্যায়ের (বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ক্লাব) শিখনকালীন মূল্যায়নের অংশ হিসেবে কাজটি মূল্যায়ন করতে হবে।
৭ম শ্রেণির ৫ম অধ্যায় (সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ) শিখনকালীন মূল্যায়নের অংশ হিসেবে কাজটি মূল্যায়ন করতে হবে। এছাড়াও ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির আচরণিক সূচক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে সব শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের প্রকল্প ভিত্তিক এই কাজের মূল্যায়ন করবেন।
৮ম থেকে ১০ শ্রেণিতে এই কার্যক্রমটি শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। শিক্ষক নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। মূল্যায়নের সময় শ্রেণি শিক্ষার্থী প্রকল্প ডায়েরিতে লেখা, চিত্র ও ছবি ইত্যাদি পর্যালোচনা করবেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে মূল্যায়নের সময় শিক্ষার্থী তার নিজ পরিবারে কতটুকু সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছে, সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন। শিক্ষক চূড়ান্ত গ্রেড শিটে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ৫০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়নে যোগ করবেন।
এছাড়াও ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করণীয় শিক্ষার্থীদের তা শেখাবো হবে। একইসঙ্গে এসব সচেতনতামূলক বাণী স্কুলের দেয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে রাখতে হবে।
জানতে চাইলে মাউশি পরিচালক প্রফেসর বেলাল হোসাইন বলেন, ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ হয়ে গেছে এটি বলা যাবে না। এবারের শিক্ষাটা সামনে কাজে লাগাবে পারবেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। আমরা এমনভাবে করেছি যাতে এর ডিমান্ড (চাহিদা) বছরব্যাপী থাকে।