ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩১ আগস্ট ২০২৩
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি
  6. কৃষি
  7. খেলাধুলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চাকরির খবর
  10. জনদুর্ভোগ
  11. জাতীয়
  12. জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪
  13. ধর্ম
  14. নারী ও শিশু
  15. ফিচার

নদী-খাল দখল এবং ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে: সুলতানা কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদন
আগস্ট ৩১, ২০২৩ ১২:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কলাপাড়া প্রতিনিধি : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী এবং ওয়াটার্স কিপার্স বাংলাদেশের সভাপতি সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘বরিশালকে বলা হয়, শস্য ভান্ডার। এখানকার সংকটাপন্ন নদী, লবনাক্ততা নিরসন, নদী-খাল দখল এবং ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী-খাল রক্ষায় খুবই আন্তরিক।’ দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অনেক মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। যে কারণে এখন অনেক মানুষকে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। দ্রব্য মূল্যের অতিরিক্ত দামের কারণে মানুষকে এখন তাঁর খাদ্য তালিকায়ও পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এসব কিছুরই সমাধান করতে পারি, যদি আমরা প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারি। কুয়াকাটা পর্যটন হলিডে হোমস অডিটরিয়ামে নদ নদী ও পরিবেশ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও আমজনতা এই তিন সমন্বয়ে পরিবেশ রক্ষা হতে পারে বলে এসময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লবের সভাপতিত্বে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিঠলেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, কুয়াকাটার পৌর মেয়র মোঃ আনোয়ার হাওলাদার, কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা, টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের ইনচার্জ আবু হাসনাইন পারভেজ, মহিপুর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আসলাম খান, কুয়াকাটা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু প্রমূখ।

স্থানীয় পরিবেশবিদ ও সাংবাদিক মেসবাহ উদ্দিন মান্নুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘নদী-খাল দখলের মতো অন্যায় দেখলে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ কেউ নষ্ট করছে এমন ঘটনা দেখলে জনগণকে প্রতিবাদ করতে হবে। এ জন্য চুপ থাকলে চলবেনা। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন, প্রত্যেকটি মানুষ যদি আন্তরিক হয় তাহলে কোনো কাজই থেমে থাকেনা। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। প্রকৃতি আমাদের সব কিছুই দিয়েছে। এ জন্য আমাদের প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। আমরা প্রকৃতিকে বাঁচাতে না পারলে, তাহলে প্রকৃতি ঠিকই অভিঘাত সৃষ্টি করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওয়াটার্স কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক এবং বিশিষ্ট পরিবেশ সংগঠক শরীফ জামিল বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এ অঞ্চলের প্রাণ প্রকৃতি ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে। এ দেশটা তৈরি হয়েছে নদী বিধৌত পলিমাটি দিয়ে। আমাদের সুন্দর এ দেশটাকে রক্ষায় দেশপ্রেমিক হতে হবে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বশেষ ইজিপ্টে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে, আমরা তার যথাযথ বাস্তবায়ন চাই। জলজ প্রাণ না থাকলে এ উপকূলের জেলেরাও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একটা গ্রামে যদি একটা বটগাছ থাকে সেখানে যদি পাখির বিচরণক্ষেত্র সৃষ্টি হয়, তাতে করে ওই গ্রামের কৃষি জমিতে অন্তত ১৬ লক্ষ রুপীর কীটনাশক কম ব্যবহার করতে হয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নদী পারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রতিমাসে অন্তত একবার হলেও নদী নিয়ে শিক্ষার্থীদের রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কথা বলেন। এতে শিক্ষার্থীরা ভীষণ উপকৃত হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে নদী-খালের ড্রেজিং করা হচ্ছে, তা যথাযথ নিয়ম মেনে করা হচ্ছেনা। এ ক্ষেত্রে ড্রেজিং করার নিয়ম অনুসরন করতে হবে। কুয়াকাটা হচ্ছে একটি পর্যটন হাব, তাই কুয়াকাটা পর্যটনের স্বার্থে বজ্র ব্যবস্থাপনার জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গ্রহন করা খুবই জরুরী।

২০১৭ সালে শুধু কলাপাড়া সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর থেকে ৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। ইলিশের এ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে আন্ধারমানিক, রাবনাবাদ পাড়ে যে সকল অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে এ উপকূলের নদী-সাগরে ইলিশের প্রাচুর্যতা রক্ষার দিক বিবেচনা করে সেসব অবকাঠামো নির্মাণ করার দিকে যত্নবান হতে হবে। এ বিষয়ে সচেতন না হলে নদী-সাগরের ওপর প্রভাব পড়বে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘হোয়াংহো নদীকে ঘিরে চৈনিক সভ্যতা, সিন্ধু নদীকে ঘিরে সিন্ধু সভ্যতা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীকে ঘিরেও সভ্যতার ক্রমবিকাশ হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা এ সভ্যতাকে রক্ষায় নদীকে টিকিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য দরকার জনসচেতনতা। তিনি আরও বলেন, নদী-খালে যদি কোনো মৎস্য ব্যবসায়ী ককশিট, মাছের বজ্র ফেলেন আমরা তাঁদেরকে শুধু জরিমানা করবোনা। ওইসব লোকদের ধরে সরাসরি জেলে পাঠানো হবে। কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সৈকতসহ পৌর এলাকার বজ্র অপসারন নিয়মিত করছেনা বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কুয়াকাটা পৌরসভায় টেকসই এবং যথাযথ উন্নয়ন কর্মকান্ড না করার কারণে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি অনেক বিনিয়োগকারী কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া তিনি কলাপাড়া উপজেলার সকল নদী-খাল দখলমুক্ত করা, সুক্ষ ফাঁসের দূয়ারী জালসহ সকল অবৈধ জালের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘কুয়াকাটা পৌরসভায় অন্তত ২০ কি. মি. মতো খাল আছে। কুয়াকাটার পরিবেশ রক্ষায় এ খালের সীমানা চিহ্নিত করে দ্রুত খাল খনন করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা পেলে কুয়াকাটা পৌরসভার নির্দিষ্ট প্রকল্পের মাধ্যমে কুয়াকাটা পৌরসভার এ খাল খনন করতে উদ্যোগ নেয়া হবে এবং খালের দু’পাড়ে সৌন্দর্য রক্ষায়ও কাজ করা হবে।

কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, ‘একটি এলাকার পরিবেশ, জীববৈচিত্র রক্ষা করা না গেলে সে এলাকাটি খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ এর দিকে কেউই খেয়াল করিনা। খাল-নদী প্রভাবশালীরা যে যাঁর মতো দখল করে ফেলছে। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ। এ জন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। আর না হলে এমন বিপদ আসবে যা থেকে কেউই রেহাই পাবেনা।

এ সময় বক্তারা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ প্রতিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভা সহ কলাপাড়া উপকূলীয় এলাকার খাল দখলমুক্ত সহ ভরাট হয়ে যাওয়া নদনদী খনন করার দাবি জানানো হয় এবং পরিবেশ রক্ষায় বেশি বেশি গাছ রোপনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়া ভূমি প্রশাসনের প্রবাহমান খাল ইজারা এবং বন্ধোবস্ত দেয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।