এম কে. রানা (অতিথি প্রতিবেদক) : আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশালের ছয়টি আসনে ইতিমধ্যে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছড়াছড়ি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বেশির ভাগ আসনে রয়েছে যোগ্য প্রার্থী সংকটে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপির দীর্ঘ প্রার্থী তালিকা থাকলেও গতানুগতিক নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ নেই তাদের। ছয়টি আসনেই প্রার্থী রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। দুটি আসনে প্রার্থী আছে যথাক্রমে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বিভক্ত জাসদের দুই গ্রুপের। এছাড়া একটি করে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ ও এনপিপি প্রার্থী দিতে পারে। প্রায় শতাধিক নেতা বিভিন্ন দলের মনোনায়ন পেতে ইতোমধ্যে নীরব প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) : জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রীর পদমর্যাদা) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি এ আসনে দলের একমাত্র প্রার্থী। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি ও দলের মিডিয়া সেল আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুুসুর রহমান এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও গাজী কামরুল ইসলাম সজল। তবে সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন সংস্কারপন্থি দলে যোগ দেয়ায় এ আসনে আ.লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বিপরীতে আকন কুদ্দুসুর রহমানকে প্রার্থী করতে পারে দলটি। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাত ও এস এম পারভেজ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের শুরা সদস্য মো. মেহেদী হাসান রাসেল। ইতিপূর্বে সংসদীয় এ আসনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হলেও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় ভোটারদের সঙ্গে দল দুটির প্রার্থীদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে দীর্ঘ বছর এ অঞ্চলে আ.লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তাছাড়া দল ক্ষমতায় থাকায় এ অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে আগামী নির্বাচনে হাসানাতকে মনোনয়ন দিলে তিনিই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) : এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মেঝ ছেলে এফবিসিসিআইর পরিচালক মঈন উদ্দিন আবদুল্লাহ এবং ছোট ছেলে আশিক আবদুল্লাহও প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়া বর্তমান এমপি মো. শাহে আলম, সাবেক দুই এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস ও মনিরুল ইসলাম মনি, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান খান, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিছুর রহমান, শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু এবং আওয়ামী লীগ ঘরানার শিল্পপতি ক্যাপ্টেন এম. মোয়াজ্জেম হোসেন প্রার্থী হতে পারেন। তবে এ
আসনটিতে ক্লিন রাজনীতির কারণে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক এমপি তালুকদার মো. ইউনুস।
অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস. সরফুদ্দিন সান্টু, যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহসম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপু এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। এ আসনে প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক এমপি আলাল কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে থাকলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ কম। ফলে প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। যিনি ২০০৭ সালের পর প্রতিকুল পরিবেশেও বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে থাকলেও তারই নির্দেশনায় চলছে এই দুই উপজেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম।
এছাড়া এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা নেছার উদ্দিন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বরিশাল-৩ আসনের বর্তমান এমপি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অধ্যাপক মন্টু লাল কুণ্ডু ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য জহিরুল ইসলাম টুটুল। জাসদ আম্বিয়া গ্রুপের প্রার্থী দুজন যথাক্রমে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনিচুজ্জামান। জাসদ-ইনু থেকে প্রার্থী হবেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সহকারী একান্ত সচিব মো. সাজ্জাদ। ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির সাহেব আলী রনি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। হিন্দু অধ্যুষিত এ আসনে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক বেশি। তবে ভোটের শক্তিতে উভয়দলই সমান সমান থাকলেও প্রার্থী নির্বাচনের ওপর জয়-পরাজয়ের বিষয়টি নির্ভর করে।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) : এ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী রয়েছে। তবে হেভিওয়েট প্রার্থী সংকটে আওয়ামী লীগ। বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দুবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল হক দুলাল, মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান আতিক দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
বিগত দিনে জোটভুক্ত নির্বাচনে শরিকদের এই আসন ছেড়ে দেয়ায় যোগ্য প্রার্থী গড়ে ওঠেনি আওয়ামী লীগে। তবে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় সাংগঠনিকভাবে এ আসনে আওয়ামী লীগ আগের তুলনায় এখন অনেকটাই শক্ত-পোক্ত। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য, জনপ্রিয়তার দিক থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দুবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন এগিয়ে থাকায় তাকে মনোনয়ন দিতে পারে দলটি।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন এবং মুলাদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস ছত্তার খান। বরিশাল কেন্দ্রীক রাজনীতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় এ আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে বেগম সেলিমা রহমান। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সম্পাদক ও সাবেক এমপি শেখ টিপু সুলতান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম। গত নির্বাচনে এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু বিজয়ী হলেও দলটির সাংগঠনিক ভিত শক্ত না হওয়ায় এবং আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থী দাড় করাতে না পারলে এবং বিএনপি নির্বাচনে এলে ধানের শীষ বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন ভোটাররা।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) : এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনায়ন প্রত্যাশী সাম্প্রতিক সময়ে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া বর্তমান এমপি পংকজ দেবনাথ, দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান। বর্তমান এমপি পংকজ দেবনাথ শেষ পর্যন্ত বাদ পড়লে ড. শাম্মী আহমেদ পেতে পারেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মহিউদ্দিন আহমেদের মেয়ে। ড. শাম্মী আহমেদ কাজ করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। অবশ্য এ আসনে বর্তমান এমপি পংকজ দেবনাথ তৃণমূল নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। তাদের মতে, পংকজ দেবনাথকে দল থেকে মনোনয়ন না দিলে এ আসনটি হারাতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা (উত্তর) বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। তবে বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় মেজবাউদ্দিন ফরহাদই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী। এ আসনে বিগত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের (মাহমুদুর রহমান মান্না) নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর এবারও প্রার্থী হবেন। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী চরমোনাই পীর সাহেবের ছোট ভাই মাওলানা সৈয়দ নুরুল করীম।
বরিশাল-৫ (সদর) : দখিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। তিনি এবারো মনোনয়ন চাইবেন। এদিকে সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সদর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ লক্ষ্যে তিনিও মাঠ গোছানো শুরু করেছেন। সিটির বাইরে গিয়ে উপজেলাগুলোতে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন তিনি। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এবং সদর উপজেলা পরিষদের দুইবারের চেয়ারম্যান চেম্বার সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনায়ন প্রত্যাশা করছেন। তবে ইতোমধ্যে মাহবুব উদ্দীন বীর বিক্রম ও এস এম জাকির হোসেন মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যবসায়ী মশিউর রহমান খানও মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। সংসদীয় এ আসনের বর্তমান এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ক্লিন ইমেজের রাজনীতি করলেও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করায় তৃণমূল পর্যায়ে তার যোগাযোগ কম রয়েছে। অন্যদিকে সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে অনেকটাই জনপ্রিয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে দলটির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন- দলের যুগ্ম মহাসচিব পাঁচবারের সাবেক এমপি ও সাবেক সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংরক্ষিত এমপি বিলকিস জাহান শিরিন, জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের মো. রহমতউল্লাহ।
এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও মহানগর জাপার সদস্য সচিব প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস এবং জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কে এম মতুর্জা আবেদীন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের মেঝ ভাই মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। নির্বাচনের পরিবেশ হলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক আ. ছত্তার। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের মতে, গত সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রকাশ্য দ্ব›দ্ব দেখা দেয়ায় আসনটি চলে যেতে পারে বিএনপির ঘরে।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) : বিগত দিনে এই আসনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক মঞ্জু এবং যুবলীগ কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের দাবি, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে যেন আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় একক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কেননা শরীক দলের এমপিদের কাছে আওয়ামী দলীয় নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ আসনটি শরিকদের ছেড়ে না দিলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক।
অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীন বিরোধ। ফলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বেশ কয়েকজন। তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখানে বিএনপির প্রার্থী জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন এবং দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শহীদুল ইসলাম। তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান দীর্ঘদিন থেকেই বিএনপির রাজনীতির হাল ধরে রাখায় মনোনয়ন দৌড়ে তিনিই এগিয়ে রয়েছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য তিনবারের এমপি নাসরিন জাহান রতœা আমিন। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহঅর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নুরুল ইসলাম আল-আমিন। জাসদের (ইনু) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসীন এবারও এই আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানা যায়।
বরিশালের এসব আসনগুলোতে কর্মীবান্ধব নেতাদের মনোনায়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে এবং বিএনপি নির্বাচনে এলে পাল্টে যেতে পারে সব হিসাব-নিকাশ। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ক্ষমতাসীন দলে মনোনয়ন পরিবর্তন করে নতুন মুখের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়াকে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা জানিয়েছেন, অধিকাংশ বর্তমান সংসদ সদস্যর বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজে কমিশন বাণিজ্যসহ রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সে হিসেবে ভোটের মাঠে জনপ্রিয়তায় তাদের অবস্থান একেবারে শুণ্যের কোঠায়। তাই নতুন মুখের প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে সিটি নির্বাচনের ন্যায় অনেকটা বিজয়ের পথ সুগম হবে। পাশাপাশি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারিকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, স্বাধীনতার পর বর্তমান সরকারের আমলে দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। তাই এখানকার ভোটাররা নৌকাতেই ভোট দেবেন। প্রার্থী বাছাই প্রশ্নে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাকেই সবাই সমর্থন করবেন।
আর আসনগুলো পুনরুদ্ধারে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে চায় বিএনপি। তবে দলটি নির্বাচনে না গেলে এসব আসনগুলোতে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়াবে ইসলামী আন্দোলন এমনটা মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
বরিশাল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না। তারপরেও আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের কী সিদ্ধান্ত আসে তারজন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, কঠোর আন্দোলন কিংবা নির্বাচন। দলের যে সিদ্ধান্তই আসুক না কেন, নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বরিশালের সবকটি আসনেই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।