ডেস্ক রিপোর্ট : দ্বীপজেলা ভোলা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার ৪টি সংসদীয় আসনেই নির্বাচনী বাতাস বইছে। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনগুলোর রাজনীতি এখন সরগরম। বর্তমানে জেলার সবকটি আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা (এমপি) দায়িত্ব পালন করছেন। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় ৪টি আসনেই আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে প্রকাশ্য বিভেদ শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা জেলার ৪টি আসনেই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটির জন্য চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল। আত্তীকরণ, পক্ষপাতমূলক আচরণ, পছন্দের লোকদের প্রাধান্য দেয়া এবং দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে হাইব্রিডদের মূল্যায়ন, অঢেল সম্পদ গড়ার দিকে মনোনিবেশ ছিল এমপিদের। ফলে সাধারণ ভোটারদের থেকে বিচ্ছিন্ন তারা। এজন্য তৃণমূল নেতাদের আশঙ্কা- আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বড় জটিল হবে।
এদিকে রাজনীতির মাঠ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সক্রিয় বিএনপি জোট। টানা ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় ভোলার বিএনপির রাজনীতি অনেকটাই ঐক্যহীন, অগোছাল। তারপরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটি হারানো আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। সবকিছু ছাপিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলো তৃণমূল ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে।
ভোলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত ভোলায় দর্শকের সারিতে অবস্থান করছে। তারা বিএনপি জোটের ঘাড়ে ভর করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় ধরনের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে এই শক্তি।
ভোলা-১ (সদর) : জাতীয় সংসদের ১১৫ নম্বর আসনটি ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ভোটার সংখ্যা ৩,০৯,৯৩৩ জন। আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিরও প্রভাব রয়েছে। ভোলা-১ আসন থেকে তোফায়েল আহমেদ পাঁচবার এমপি হয়েছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন। তার বিপরীতে আছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা। এছাড়াও মনোনয়নের লড়াইয়ে আছেন ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান হিরণ ও আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য হেমায়েত উদ্দিন হিমু। এই আসনটিতে কোনো কারণে জাতীয়
নেতা তোফায়েল আহমেদ নির্বাচন না করলে তার একমাত্র কন্যা ডা. তাসলিমা আহমেদ মুন্নী নির্বাচন করতে পারেন।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে তোফায়েল আহামেদের শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী কেউ না থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আওয়ামী লীগের এই আসনটিতে এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ক্ষমতার ভারসাম্যহীন রাজনীতিই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
তারা মনে করছেন, ক্ষমতার এই ১৫ বছরে ব্যাপক আত্তীকরণ, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নে দলের ভেতরে ও বাইরে বিদ্রোহীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যার ফলে দলটি কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হওয়ার ফলে তৃনমূল দুর্বল হয়েছে। এই অবস্থার অবসান না হলে আসনটিতে আওয়ামী লীগের বড় বিপর্যয় হতে পারে।
অন্যদিকে ভোলা সদর আসনে বিএনপির অন্তঃকোন্দল চরমে। ২০১২ সালে সাবেকমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহানের মৃত্যুর পর আসনটিতে দলীয় কোন্দল শুরু হয়। এটি বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জেলা থেকে তৃনমূল পর্যন্ত দুটি গ্রুপে বিভক্ত ভোলা জেলা বিএনপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ট গিয়াস উদ্দিন আল মামুন তার ভাই বিএনপির সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহীমকে দিয়ে একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন, আরেকটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন কে সাবেক এমপি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, নাজিমউদ্দিন আলম ও জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর। দলটির গ্রুপিং সমস্যা অচিরেই নিয়ন্ত্রণ না হলে নিজেদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।
এই আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন জেলা সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেলিন, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শফিউর রহমান কিরন এবং গিয়াস উদ্দিন আল মামুন।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী হচ্ছেন দলটির চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আন্দালিব রহমান পার্থ। বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাজিউর রহমান মঞ্জুর মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন পার্থ। অনেক চড়াই উতড়াই পেরিয়ে দেড়যুগ ধরে টিকে থাকার লড়াইয়ে এখনো বেশ অবস্থানে রয়েছে দলটি। দলটির জেলা সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন বলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না।
এছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে ভোলা-১ আসনে প্রার্থী হবেন মাওলানা ইয়াছিন নবীপূরী। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেফায়েত উল্লাহ নজীব, আজিম গোলদার প্রমুখ।
ভোলা- ২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখাঁন) : ২টি পৌর সভা ও ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১১৬ নম্বর (ভোলা-২) আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ২৯৭০২৩ জন। আসনটি বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলা নিয়ে গঠিত। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হয়েছিলেন সংবিধানপ্রণেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষাসৈনিক রেজা-এ-করিম চৌধুরী (চুন্নু মিয়া)। ১৯৭৩ সালে এই আসনেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের ৭ জন, বিএনপির ২ জন, জাতীয় পার্টির ১ জন এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে এই আসনের এমপি আওয়ামী লীগের আলী আজম মুকুল। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনেও রয়েছে দলীয় কোন্দল। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আশিকুর রহমান শান্তর সঙ্গে আরেকটি গ্রুপকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান সংসদ আলী আজম মুকুল।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, শান্ত এবং মুকুল দুজনের অবস্থানই ভালো। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই আসন থেকে তোফায়েল আহমেদ চারবার নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের পর দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচিত হন তারই ভাতিজা আলী আজম মুকুল। তবে মামলা, হামলায় আক্রান্ত বঞ্চিত নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় বর্তমান তিনি ইমেজ সংকটে রয়েছেন। এই সুযোগে শান্ত স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তার অবস্থান পোক্ত করেছেন। শেষ পর্যন্ত দুই গ্রুপের কোন্দল না মিটলে আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এই আসনটি হাত ছাড়া হয়ে যাবে।
এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে আরো মনোনয়ন চাইবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ ভোলা জেলা শাখার সাবেক সদস্য মো. ওমর শরীফ। সাবেক এমপি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের পুত্র জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. আফতাব ইউসুফ রাজ।
এদিকে বিএনপির সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহীম ও তার স্ত্রী দৈনিক খবরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাফরুজা সুলতানা এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন। যদিও তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। দুদকের এক মামলায় হাফিজ ইব্রাহীমের ১০ বছর ও স্ত্রীর ৩ বছরের কারাদণ্ড হওয়াসহ নানা কারণে খানিকটা কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও রাজনীতির মাঠে তারা সক্রিয়। দলীয় সূত্র বলছে, একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহীম। হাফিজ ইব্রাহিমের নির্বাচন করতে আইনি কোনো বাধাও নেই। আরো মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম মমিন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আলম।
এছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ভোলা জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ওবায়েদ বিন মোস্তফাও নিজ নিজ দল থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানান।
ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) : লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা নিয়ে ভোলা-৩ আসনটি ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ভোটার সংখ্যা ২,৯৩,৫৪৭ জন। এখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের প্রধান বড় দুই রাজনৈতিক দলসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এখানে উন্নয়নের তেমন একটা ছোঁয়া লাগেনি। দলটিতে রয়েছে একাধিক বিভক্তি। বর্তমান এমপি তার নিজস্ব বলয় শক্ত করতে ত্যাগীদের বঞ্চিত করে হাইব্রিড, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দীর্ঘদিন ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা বিএনপির অবস্থাও নাজুক। তবে এ আসনে তাদের সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে রয়েছে ঐক্য। ভোটের সুযোগ পেলে সেটির প্রতিফলন ঘটাবে এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান এমপি নুরন্নবী চৌধুরী শাওন, সাবেক এমপি মেজর (অব.) জসীম উদ্দিন আহমেদ, বিবিএস গ্রুপ ও নাহী গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার, ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের আলী স্বপন। দলগতভাবে তাদের আলাদা আলাদা গ্রুপ রয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান এমপি নুরন্নবী চৌধুরী শাওন মনোনয়ন প্রত্যাশী কাউকে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে দেন না।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন দলীয় দুর্গখ্যাত লালমোহন-তজুমুদ্দিন আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ছয়বারের এমপি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। এছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও সুপ্রিমকোর্ট শাখার যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন, মার্শাল হিমু, অ্যাডভোকেট ছিদ্দিকুল্লাহ মিয়া, চরভূতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান টিটবের নামে জনশ্রæতি আছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ভোলা জেলার সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী সুমন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মেসলেমউদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে।
ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) : চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা নিয়ে ভোলা-৪ আসনে ১টি পৌরসভা ও ২৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। ভোটার সংখ্যা ৩,৬৮,৫৫৩ জন। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে কোনো দলের একক আধিপত্য ছিল না। ২০০৮ সাল থেকে আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। বর্তমান এমপি চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত চরফ্যাশনে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তবে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, টেন্ডার বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্যের কারণে দলটির ভিতরে বাইরে অনেক ক্ষোভ রয়েছে। এটি আরো প্রকাশ্যে এসেছে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব এবং ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিনের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায়। তার এ ঘোষণায় নতুন করে হিসেব করেছেন চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার রাজনৈতিক কর্মী ও ভোটাররা।
অন্যদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে রাজনীতির মাঠ চাঙ্গা করছে বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে এ আসনের এমপি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম। তিনিও দলীয় কোন্দলের কারণে সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। তার বিপরীতে মনোনয়ন চাইছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নয়ন। এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন আইনজীবী মো. ছিদ্দিকুল্লাহ মিয়া। জাতীয় পার্টি থেকে জেলা সভাপতি কেফায়েত উল্লাহ নজীব, চরফ্যাশন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মনিরুজ্জামান শহীদ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে মো. আলাউদ্দিন হাজি এবার এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন।
সাধারণ ভোটাররা জানান, আওয়ামী লীগ ব্যাপক উন্নয়ন করেছে ঠিকই। কিন্তু সুশাসন নিশ্চিত না করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আছে। ফলে মানুষ একজন পরিচ্ছন্ন প্রার্থী চাইছেন। সেক্ষেত্রে এলাকাবাসীর কাছে নতুন প্রার্থীই গ্রহণযোগ্য হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক আরজু বলেন, ভোলার ৪টি আসনই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে যা বিএনপি জামায়াতের দুঃশাসনের আমলে কিউ চিন্তাও করতে পারেনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোলার সব কটি আসনেই আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নেতা তোফায়েল আহামেদের আসনে কোনো বিভক্তি নেই। যতদিন তোফায়েল আহমেদ নিঃশ্বাস নেবেন ততদিন ভোলায় তার বিকল্প চিন্তা করা বোকামি। এবারও তিনিই নির্বাচন করবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা বলেন, একটি বড় দলে কিছু মতপার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকেই ভোলার মানুষ নির্বাচিত করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন করে অন্যায় আবদার কখনো পুরন করতে পারবে না। তাছাড়া যাদের কোনো জনসমর্থন নাই তারা কিভাবে দাবি আদায় করবে?
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর বলেন, সব ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ভোলার ৪টি আসনেই বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে। শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত না করা পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে না। দাবি আদায়ের পর আগামী নির্বাচনে দলের হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবে সব নেতাকর্মী তার পক্ষেই কাজ করবে। বিএনপির রাজনীতিতে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।