ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের বাজারে ডিমের পর এবার আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এমন সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছে। দাম না কমায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় দফায় আরো ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। আমদানির খবরে পাইকারিতে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও খুচরায় এর প্রভাব নেই।
রাজধানীর বাজারে মাছ, মাংস ও সবজির দাম এখনো চড়া। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে মুরগির সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ার কারণে মুরগির দাম বেড়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিলেও এখন পর্যন্ত বাজারে কার্যকর হতে দেখা যায়নি।
প্রতিদিন রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চলছে, এর পরও সরকারের নির্ধারিত দর কার্যকর হচ্ছে না। বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী আলু খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা, বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হওয়ার কথা ৪৮ টাকায়, বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
পেঁয়াজ ও আলুর দাম না কমে উল্টো খুচরা বাজারগুলোতে সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের লাগাতার অভিযানে লোকসানের ভয়ে তাঁরা দোকানে নতুন করে পেঁয়াজ ও আলু তুলতে চাইছেন না। পাইকারি বাজারেও দেশি পেঁয়াজ ও আলুর সরবরাহ কমেছে।
জানতে চাইলে রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পেঁয়াজ আমদানিকারক আব্দুল মাজেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এতে দেশি পেঁয়াজের দাম কমছে না।
তিনি বলেন, এক সপ্তাহে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা কমেছে। এখন আমদানীকৃত পেঁয়াজ মানভেদে কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ কেজি ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাড্ডার আব্দুল্লাহ স্টোরের ব্যবসায়ী শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া পেঁয়াজ, আলু ও ডিম—এই তিন পণ্যের মধ্যে একটির দামও পাইকারি বাজারে কমেনি। তাই আমরা কমিয়ে বিক্রি করতে পারছি না। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ডিমের হালি ৫০ টাকা।’
আরো ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন
ভারত থেকে আরো ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানি করা প্রতিটি ডিম খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম ১২ টাকায় বিক্রি হবে। দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান এক কোটি করে ডিম আমদানি করতে পারবে।
গতকাল এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. হায়দার আলী গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন করে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে (এক কোটি করে) ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানি করা ডিম লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এটি শুরু হবে।
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের চার প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে মোট চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টারস অ্যান্ড সাপ্লাইয়ারস, টাইগার ট্রেডিং ও অর্নব ট্রেডিং লিমিটেড।
ডিম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চিজ গ্যালারির স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল তাঁর প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডিম আমদানির অনুমতি পেয়েছে। এর মধ্যে ভারতের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রতি পিস ডিমের দাম পড়বে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ রুপি। এ ছাড়া ৩৩ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হবে। সেই হিসাবে বাজারে ৮ থেকে ৯ টাকা দরে পাইকারি এবং ভোক্তা পর্যায়ে ১০ টাকায় বিক্রি সম্ভব।
কোন রঙের ডিম আমদানি করা হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাল-সাদা যেটিই পাওয়া যায় এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তাদের দেওয়া যায়, সেই ডিম আমদানি করা হবে।
আলু আমদানির সুপারিশ করবে ভোক্তা
নীলফামারীতে গতকাল সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক মতবিনিময়সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, প্রয়োজনে আলু আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখা হবে। দেশে আলুর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সমস্যাটা হচ্ছে হিমাগার থেকে। সরকারি দরে ২৭ টাকা কেজিতে বিক্রি না করে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে আলু আমদানির সুপারিশ করা হবে, যা কারো জন্য সুখকর হবে না।
জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রতিটি হিমাগারে সরকারি দরে আলু বিক্রির ব্যানার প্রদর্শন এবং ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যান্য জেলায় আলুর পরিস্থিতি
জয়পুরহাট :
হিমাগারে দাম বেঁধে দেওয়ার পর গতকাল থেকে আবার আলু বিক্রি শুরু হয়েছে। হিমাগারে আগে প্রতি বস্তা (৬০ কেজি) অ্যাস্টেরিক জাতের আলু যেখানে বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৪০০ টাকায়, সেই আলু বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকায়। তবে দেশি গুটি আলুর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি অভিযানের কারণে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে।
হিমাগারে আলুর দাম কমলেও খুচরা বাজারে এখনো প্রভাব পড়েনি। বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে।
বগুড়া :
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের পর বগুড়ার বাজারে আলুর সরবরাহ কমে গেছে। খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, হিমাগার থেকে কম দামে আলু না পেলে বাজারে তা বিক্রি করা সম্ভব নয়। বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বাজার খ্যাত মহাস্থান হাটে গতকাল পাইকারি শেডে আলুই ছিল না। শহরের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত রাজাবাজারে বেশির ভাগ আলুর আড়তদার আলু কেনাবেচা করেননি।
মহাস্থান হাটে আলুর আমদানি নেই উল্লেখ করে ওই বাজারের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, অন্য দিন ২০০ থেকে ৩০০ বস্তা আলু কেনাবেচা হতো, সেখানে হাতে গোনা কয়েকজন আলু নিয়ে আসেন বাজারে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কাঁচামাল ব্যবসায়ী ও আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রহিদুল ইসলাম বলেন, মহাস্থান বাজারে আলু তেমন ওঠেনি। যে দু-চারজন আলু নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে ভয়ে কেউ আলু আনছে না। কোল্ড স্টোরেজ থেকে পকেটের টাকা দিয়ে বাজারে আলু কিনে এনে কে জেল-জরিমানা দিতে চায়? স্টোর গেটে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা কেজি, সেই আলু বাজারে এনে কে সরকারি দামে বিক্রি করে লস দেবে?’
সবজির দাম বাড়তি
রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রায় সব সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। গোল বেগুন মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, ঢেঁড়স, পটোল ও চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালকুমড়া প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০ টাকা। টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কচুমুখি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা কেজি।
সূত্র: কালেরকন্ঠ