ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তৃতীয় দফার টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনের সন্ধ্যায় রাজধানীতে চারটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে।
বুধবার (৮ নভেম্বর) রাতে তাঁতীবাজার, ডেমরা, কাকলী ও জিগাতলায় বাসে আগুন দেয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয় সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে তাঁতীবাজার মোড়ে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় অবরোধকারী। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করে।
এর কিছু পরে রাত ৮টার দিকে বনানী এলাকায় কাকলী পুলিশ ফাঁড়ির সামনে একটি মিনিবাসে আগুন দেয়া হয়। খবর পেয়ে কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তবে তাদের পৌঁছানোর আগেই আগুন নিভে যায়।
এছাড়া রাজধানীর ডেমরা এলাকায় রাইদা পরিবহনের একটি বাসেও আগুন দেয়া হয়েছে। রাত সোয়া ৯টার দিকে জিগাতলায় একটি বাসে আগুন দেয়া হয়।
এদিকে তাঁতীবাজারে বাসে আুগনের ঘটনায় এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আটকের পর তাকে বংশাল থানায় নেয়া হয়।
এরআগে দ্বিতীয় দফার অবরোধের শেষ দিন সোমবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অবরোধ কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগে ফায়ার সার্ভিস থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার সকাল ৪টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুদিনে মোট ২১টি আগুনের খবর পেয়েছেন তারা।
এরমধ্যে ঢাকা সিটিতে ১২টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর, কালিয়াকৈর, নারায়ণগঞ্জ) ৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (খাগড়াছড়ি, আনোয়ারা, পটিয়া) ৪টি, রাজশাহী বিভাগে (বগুড়া) একটি আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। এতে ১৫টি বাস, ২ টি ট্রাক, ১ টি প্রাইভেটকার, ১ টি সিএনজিচালত অটোরিকশা ও ১ টি লেগুনা পুড়ে যায়। এই ২১টি অগ্নিকাণ্ড নেভাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৪১টি ইউনিট এবং ২৪২ জন দমকলকর্মী কাজ করেন।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করা দেখা গেছে, দিনের চেয়ে রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এই ২ দিনে মোট ২১টি আগুনের মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৬টি আগুনের ঘটনা ঘটে এবং বাকি ৫টি দিনের অন্যান্য সময়ে সংঘটিত হয়।
এর আগে ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির হরতাল-অবরোধে ঢাকায় ৬৪টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া ঢাকার বাইরে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০টি বাস এবং ৪টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে পরিবহন খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
হরতাল-অবরোধের কারণে শুধু পরিবহন মালিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বরং শ্রমিকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন মন্তব্য করে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, হরতাল-অবরোধ বারবার দেয়া হলে পরিবহন খাত বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কাজেই এ ধরনের কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করেন তিনি।
রাজধানীতে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। পরদিন ২৯ অক্টোবর হরতাল পালন করে বিএনপি। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয় বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর)। আবারও রবি ও সোমবার (৫ ও ৬ নভেম্বর) দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধ পালন করা হয়।
বিএনপির ডাকা দ্বিতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই সোমবার (৬ নভেম্বর) নতুন করে আবারও দুদিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা। বুধবার (৮ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হবে।