এইচ.এম.এ রাতুল: বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেবা প্রত্যাশীদের দেওয়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে পাসপোর্ট অফিসের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমান পাওয়া গেছে। পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেন বলেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে দুদকের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এইচএম আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযান চলাকালে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে আসা একাধিক সেবা প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলেন দুদকের কর্মকর্তারা। সেবাপ্রত্যাশীরা জানান, আবেদনপত্র গ্রহণে হয়রানি, ভুল নির্দেশনা দিয়ে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ঘুরানো, অফিসের বাইরের নির্ধারিত দোকান দিয়ে আবেদন করাতে বাধ্য করা এবং দালালদের দৌরাত্ম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ সময় সেবা প্রত্যাশী শাকিল বলেন, তিন মাস আগে পাসপোর্টের আবেদন করে তা জমা দিতে এসে হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি। সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে দুই হাজার টাকা বেশি দিয়ে অবশেষে আজ (মঙ্গলবার) পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে এসে দালাল ছাড়া কাজ করা প্রায় অসম্ভব বলেন তিনি। আরেক সেবাপ্রত্যাশী বরিশাল নগরীর বাসিন্দা বশির বলেন, “আমি তিনটি পাসপোর্ট করিয়েছি। তাতে ভয়ংকর রকমের হয়রানির শিকার হয়েছি। পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা একসঙ্গে কখনোই বলেন না। বারবার সময়ক্ষেপণ করে মূলত দালালের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করেন। তিনটি পাসপোর্ট করতে সরকার নির্ধারিত ৫৭৫০ টাকার চেয়ে বাড়তি তিন হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেন বলেন, মানুষ অসচেতন হওয়ায় সঠিকভাবে আবেদন ফরম পূরণ করতে পারে না। এর ফলে পাসপোর্ট করতে এসে ভোগান্তিতে পড়ে। আমরা সেবাপ্রত্যাশীদের বারবার বলে দেই কী কী কাগজপত্র নিয়ে আসতে হবে। এমনকি সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া কাউকে কোনো টাকা না দেয়ার জন্য বলা হয়। তারপরও এমন কোনো অভিযোগ পেলে আমি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, আজকে দুর্নীতি দমন কমিশনের টিম এসেছেন, তারা অভিযোগ শুনেছেন।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমি একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ যেহেতু সুনির্দিষ্ট সেহেতু আমি আমার অফিসের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করব। সেবার ব্যত্যয় হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক এইচএম আক্তারুজ্জামান বলেন, দুদক হেডকোয়ার্টার থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযানের অংশ হিসেবে এখানে অভিযান চালানো হয়েছে। একজন সেবাগ্রহীতা বরিশাল পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে, এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের দৌরাত্মে হয়রানি, পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ দিলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। আমরা অনিয়মের চিত্র দেখতে পেয়েছি। এখানে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনিয়ম রোধে সেবা প্রত্যাশীদের সচেতন করেছি, পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বরত যুগ্ম-পরিচালককে পরামর্শ দিয়েছি অনিয়ম বন্ধে তিনি যেন কার্যকর ভূমিকা রাখেন। যুগ্ম পরিচালক আমাকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে আরও কঠোর হবেন।