নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালে বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে ৫ বছর বয়সী কণ্যাশিশু রোজা ও তার বাবা নাঈমের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর কাউনিয়া পানির ট্যাংকি সংলগ্ন স্বপ্ন বিলাস নামক ভবনের ৪র্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। স্বজনদের দাবি, প্রথমে নাঈম তার কন্যাকে হত্যা করে পরে নিজেও আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি রহস্যজনক। এ ঘটনাটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু সেটি তদন্তে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডি ও মহানগর গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা। বিষয়টি নিশ্চিত করে কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান জানান, মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সাত বছর পূর্বে নগরীর দক্ষিণ পলাশপুরের বাসিন্দা নুর ইসলাম মোল্লার মেয়ে অনা আক্তারের সঙ্গে নাঈমের বিয়ে হয়। ৪ মাস পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় নাঈমের। কিন্তু স্ত্রী অনা আক্তার তাকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছিলেন। সাবেক স্ত্রীর এসব চাপ সহ্য করতে না পেয়ে নাঈম ঘরে থাকা বটি দিয়ে প্রথমে নিজের মেয়েকে জবাই করে হত্যা করেন। পরে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন। আমরা এসব তথ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছি, তবে আদৌ তা ঘটেছে কিনা সেটি তদন্ত সাপেক্ষ। নিহত নাঈম অপসোনিন কোম্পানির গাড়িচালক ছিলেন। সেই চাকরি চলে যাওয়ার পর তিনি নতুন একটি চাকরি খুঁজছিলেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, ঘটনাটি নিয়ে এত দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না। একটু তো রহস্য রয়েছে। নিহতের পরিবার দাবির ওপর আমরা নির্ভর করছি না। বিষয়টি আরও গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
স্বপ্ন বিলাস ভবনের মালিক জাহিদুল ইসলাম বাবুল জানিয়েছেন, নিহত নাঈম ও তার পরিবার গত ১ মে থেকে আমার বিল্ডিংয়ের চার তলার উত্তর পাশের ফ্ল্যাটে ওঠেন। সকালে আমার ছেলে কল করে জানিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটে ডাবল মার্ডার হয়েছে। আমি ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি পুলিশ সদস্যরা নিজেদের কাজ করছেন। তাদের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেওয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নাঈম তার বাবা-মা, মেয়ে রোজা, বোন আখি ও বোনের মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে তাদের ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। এ বাসায় আসার পর থেকে তাকে বিষন্ন দেখা যেত। পরে জানতে পারি স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছে।
নিহত নাঈমের বোন আখি আক্তার বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে ভাই ও ভাতিজিকে ডাকতে তাদের কক্ষে যাই। গিয়ে দেখি তাদের রক্তাক্ত দেহ নিথর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমাদের চিৎকার শুনে বাড়িওয়ালা এসে পুলিশকে জানিয়েছে।
নাঈমের বাবা শাহজাহান হাওলাদার জানান, গত রাতে ছেলে ও নাতনির সঙ্গে ঘুমিয়েছিলেন তিনি। সকাল সোয়া ৭টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নাঈমকে পান্তা ভাত খেতে দেখেন। রোজা তখন ঘুমাচ্ছিল। তিনি বের হওয়ার সময় নাঈম তার কাছে ২০ টাকা চান। টাকা দিয়ে তিনি অনন্যা ফ্লাওয়ার মিলে (তার কর্মস্থল) চলে যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আখি তাকে কল করে নাঈম ও রোজার মৃত্যুর সংবাদ দেন।
তিনি আরও জানান, প্রায় সাত বছর আগে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দক্ষিণ পলাশপুরের বাসিন্দা নুর ইসলাম মোল্লার মেয়ে অনা আক্তারের সঙ্গে নাঈমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। চার মাস আগে অনা তার ছেলেকে তালাক দেন। দেন মোহরের ৫ লাখ টাকাও নেন। স্ত্রীর তালাক পেয়ে নাঈম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে অনা কল করে রোজাকে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। তারপর থেকেই নাঈম খুব বিচলিত ছিল।
বরিশাল মেট্রোপলিটনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সরোয়ার হোসেন, আমাদের প্রাথমিক ধারণা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই ঘটনাটি ঘটে। বিশেষ করে নাঈমের সঙ্গে তার স্ত্রীর তালাক হয়েছে। এরপর থেকে শিশুকন্যাকে কাছে রাখেন। তিনি আজ সকালে রোজার মা এসে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়টি নাঈম মেনে নিতে পারেননি। সেখান থেকেই হয়তো হত্যা ও আত্মহত্যাটি ঘটে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে। তদন্ত করে না করে প্রকৃত রহস্য কি? তা বলা যাবে না।