ডেস্ক রিপোর্ট: ব্যাংক নির্বাহীদের সন্দেহজনক লেনদেন ও বিলিয়ন ডলার ঋণ খেলাপির কারণে তারল্য সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। এমন অভিযোগের মধ্যেই গত মার্চ মাসে ৬১টি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে এক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য তাদের ব্যালেন্সশীট ঠিক করা ও সেগুলোর কার্যক্রম চালু রাখা। কিন্তু এই নির্দেশের পর গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ নামক ঢাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বেসরকারি খাতের ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকের সঙ্গে কী ঘটতে পারে আমি জানি না। ভরসা করতে না পেরে আমি আমার টাকা তুলে ফেলেছি।’
তবে ব্যাংকগুলো এক করা হলে গ্রাহকের আমানত ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত’ থাকবে এমন সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও সারা বাংলাদেশের আমানতকারীরা সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে সঞ্চয় তুলে নিচ্ছে।
বেসিক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবু মো মোফাজ্জল নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা তোলার আবেদন পেয়েছি।’
বেসিক ব্যাংক এক দশক আগে ২,২০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছে এবং ম্যানেজমেন্টকে চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে তারা বলেছে, ‘অস্বাভাবিক’ অর্থ উত্তোলনের কারণে ব্যাংকের দৈনিক ব্যবসার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আতঙ্কের কারণে একটি গুরুতর তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যাংক যেকোনো সময় চেক ডিজঅনার হতে পারে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এর আগে একীভূতকরণ উদ্যোগকে ন্যায্যতা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করছি। তাদের রেকর্ড দেখে আশা করা যাচ্ছে এর ফলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।’ একীভূত হতে প্রায় তিন বছর সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের ঋণদাতাদের প্রায় ১২.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ইতোমধ্যে পুনরুদ্ধারের অযোগ্য হিসেবে বাতিল করা হয়েছে।
গত বছর বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের শেষের দিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার (৯.৪ শতাংশ) পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অকার্যকর ঋণের হার ছিল বাংলাদেশের (১০.৯ শতাংশ)
বিষয়টি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নজর এড়ায়নি। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক উভয়ই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ব্যাংকের ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিগত ১৫ বছরে ১৯৯২ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে ২০টির বেশি নতুন ব্যাংক পরিচালনার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।
একীভূতকরণ পরিকল্পনার আওতায় পদ্মা ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে, ন্যাশনাল ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে এবং বেসিক ব্যাংক সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, ‘ভুল নীতি’ এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যাংকিং খাত এখন শোচনীয় অবস্থায়। এর জন্য তিনি ব্যাংক পরিচালকদের কাঁধেই বেশিরভাগ দোষ চাপিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সমস্যা এখন খুবই গুরুতর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র অর্থনীতিতে কখনোই ৬১টি ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় এগুলো অনুমোদন পেয়েছে।’