এস এম জাহিদ : বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাগ্যক্রমে ভুল অপারেশনের হাত থেকে রক্ষা পেলেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা এক নারী। নেয়া হয়েছিলো অপারেশন থিয়েটারেও।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ব্রামনদিয়া গ্রামের ফরাজি বাড়ির বাসিন্দা মোসাম্মৎ আঁখি। কয়েকদিন ধরে পেটের ব্যাথায় ভুগে উন্নত চিকিৎসার জন্য আসেন বরিশাল শেবাচিমে। ভর্তি হন তৃতীয় তলার প্রসূতি বিভাগে। ভর্তি হওয়ার পরপরই তাকে দেখতে আসেন ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের একটি দল। করতে বলেন আট থেকে দশ রকমের পরীক্ষা। ঠিকানাও দিয়ে দেন কোথায় করাতে হবে এ সকল পরীক্ষা। ১৮ ই আগষ্ট রাতে সকল পরীক্ষা সম্পন্ন করে বিভাগের সহকারী চিকিৎসকদের রিপোর্ট দেখানো হলে তারা জানান জরুরি ভিত্তিতে তার অপারেশন করতে হবে। ২২ আগষ্ট বিকালে তার অপারেশনের তারিখ নির্ধারণ করে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক। নির্ধারিত তারিখে আঁখিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পরে তাকে এনেস্থিসিয়া প্রয়োগ করার পরে ভাগ্যক্রমে রক্তের অভাবে বাতিল করা হয় অপারেশন। রোগীর স্বজনদের ডেকে জরুরী ভিত্তিতে ২ ব্যাগ রক্তের জোগাড় করতে বলেন তারা। ডাক্তারের নির্দেশে তড়িঘড়ি করে ঐ দিন রাতেই ২ ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে ডাক্তারকে অবহিত করা হলে পরদিন সকালে পুন:রায় অপারেশন করার কথা জানায় তারা।
কিন্তু পরদিন সকালে প্রসূতি বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ডা.নাসরিন সুলতানা রোগীর রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জানান তার আর অপারেশন লাগবে না। ঔষধ সেবনের মাধ্যমেই তার ব্যাথা ভালো হবে। এমনকি তিনি আরও জানান একই ওয়ার্ডে দু জন আঁখি হওয়ায় ভুলে তাকে অপর আঁখির পরিবর্তে তাকে থিয়েটারে নেয়া হয়েছিলো। এ সময়ে রোগীর কাছে ক্ষমা চেয়ে দায় সারার চেষ্টা করেন তিনি। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের এমন নজিরবিহীন অবহেলার খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে ডাক্তার নাসরীন সুলতানাকে প্রশ্ন করলে তিনি তার জুনিয়রদের ভুল হয়েছে স্বীকার করে বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে রোগীর ভাই কামাল হোসেন অভিযোগ করে জানান গাইনি বিভাগ ২ এ আঁখি নামে দ্বিতীয় কোন রোগী ছিলো না। তিনি এই অবহেলার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিকারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে শেবাচিম পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কলটি রিসিভ করেন নি।
সম্প্রতি জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি শেবাচিম পরিদর্শন করে সেবার মান উন্নয়নের আশ্বাস দিলেও তার বিপরীতে হাটছে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা সেবায় অবহেলা ও নিন্ম মানের সেবার একের পর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেই চলেছে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা। অনেকেই আবার হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ইন্টারনিদের হাতে তুলে দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রাইভেট চেম্বারে। এ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হলেও কর্নপাত করছে না কর্তৃপক্ষ।
নতুন পরিচালক সাইফুল ইসলাম যোগদানের পরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে আশার আলো দেখা গেলেও তা বাস্তবে রূপদান করতে পারছেন না তিনি। বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলবাসীর একমাত্র ভরসাস্থল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা