স্পোর্টস ডেস্ক : মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বাংলাদেশকে ৮৬ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সব উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রান করে। বাংলাদেশ ৪২তম ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ১৬৮ রানের বেশি করতে পারেনি।
রান তাড়ায় নামা বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য মঞ্চটা ছিল পরীক্ষারও। বিশেষত তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য একটু বেশি। তারা তাদের দাবিটুকু জানিয়ে রেখেছেন হেরে যাওয়া ম্যাচেও। লিটনের জন্য পরীক্ষা ছিল না, তবে তার ফর্ম নিয়ে তৈরি হওয়া দুশ্চিন্তা কাটাতে পারেননি তিনি। কাইল জেমিসনের বলে লিটন যখন ক্যাচ যখন ক্যাচ দেন, তখন ১৬ বলে ৬ রান করেছেন। আউট হয়ে ফেরার সময় হতাশায় ড্রেসিংরুমের কাছে গিয়ে ব্যাট আছাড় মারেন লিটন।
তিনে খেলতে নামা তানজিদ হাসান তামিমের অভিষেক হয়েছিল এশিয়া কাপে। কিন্তু সেখানে দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে জায়গাটা পাকা করতে পারেননি। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সেটি এবার করতে পারা তার জন্য খুব সম্ভব। কিন্তু ৩ চার মারা এই ব্যাটার ১২ বলে ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি।
ইনসাইট-আউট করে শট খেলতে গিয়ে উপরে উঠে যাওয়া বল ইশ সোধির বলে ক্যাচ দেন মিড অফে দাঁড়ানো লুকি ফার্গুসেনকে। কোথাও রান না করা সৌম্য সরকার দ্বিতীয় বলে ফিরেছেন শূন্য রান করে। স্নায়ুচাপে ভোগা এই ব্যাটার সোধির ‘লোপ্পা’ বলে ‘দৃষ্টিকটুভাবে’ ক্যাচ দেন তার হাতেই। বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাকা থাকা তাওহীদ হৃদয়ও দলের রান বড় করতে পারেননি। ৭ বলে ৪ রান করে সোধির বলে বোল্ড হন তিনি।
এই পুরোটা সময়ই একপ্রান্ত আগলে থাকেন তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের পর অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তাকে পরে ফিরিয়ে আনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পিঠের চোটে এশিয়া কাপেও খেলতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেললেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় ম্যাচে নেমে শুরুতে তার ব্যাটে বল আসছিল না ঠিকঠাক।
কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ততই ছন্দ ফিরে পেয়েছেন তিনি। ষষ্ঠ ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে একটি ও কাইল জেমিসনকে সপ্তম ওভারে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান তামিম। তখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে গ্যালারি। জ্বলে উঠে ফোনের ফ্ল্যাশও। ওই দুই ওভারের পর তামিম খেলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যেই। যদিও ইনিংস ততটা লম্বা করতে পারেননি।
৭ চারে ৫৮ বলে ৪৪ রান করে সোধিকে সুইপ করতে যান, তখন তার গ্লাভসে লাগলে ক্যাচ যায় উইকেটরক্ষক টিম ব্লান্ডেলের কাছে। শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় নিউজিল্যান্ড, তামিম এরপরই হাঁটা ধরেন সাজঘরের পথে।
পরের গল্পের পুরোটাই ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ঘিরে। বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। এরপর তাকে নিয়ে ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্বকাপের আগে এই ম্যাচটি ছিল তার একমাত্র পরীক্ষার জায়গা। সেটিতে কি পাশ করেছেন রিয়াদ? জানা যাবে দুয়েকদিনের মধ্যে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ দল ঘোষণায়।
তবে তাকে ঘিরে গ্যালারির উচ্ছ্বাস ছিল স্পষ্ট। প্রতিটি রানের পরই চিৎকার করছিলেন সমর্থকরা। একটা সময় যখন বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা একদমই ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল, তখনও গ্যালারি ভর্তি দর্শকের চোখ ছিল মাঠে; কারণ রিয়াদ তখনও ব্যাট করছিলেন। তাকে অবশ্য একটু আফসোস নিয়েই ফিরতে হয়েছে। ম্যাককোনকির যেকোনো জায়গায় পাঠানো যাবে, এমন বল শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হন রিয়াদ। ৭৬ বলে ৪৯ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় রিয়াদকে।
তার ফেরার সঙ্গে দর্শকরাও ছাড়তে থাকেন গ্যালারি। বাংলাদেশের ম্যাচের একদমই ক্ষীণ যে সম্ভাবনা ছিল, সেটিও শেষ হয় অবধারিতভাবেই। তবে এরপরই একটা প্রাপ্তি ছিল নাসুম আহমেদের ব্যাটিং। এশিয়া কাপে ভারত ম্যাচের পর এটিতেও রান পেয়েছেন তিনি। ১ চার ও ২ ছক্কায় ৩০ বলে করেন ২১ রান।
এর আগে নতুন বলে ছন্দে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় থাকা মোস্তাফিজ বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন। তৃতীয় ওভারে এসে উইল ইয়ংকে ফেরান তিনি। ৮ বলে শূন্য রান করা এই ব্যাটার মোস্তাফিজের বাউন্সার লাফিয়ে ওঠে ব্যাট সরাতে যান, কিন্তু ক্যাচ চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের কাছে।
দ্বিতীয় উইকেটও আসে মোস্তাফিজের হাত ধরেই। এবার ১৫ বলে ১২ রান করা ফিন অ্যালেনের দারুণ এক ক্যাচ নেন প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকার। বাংলাদেশকে পাওয়ার প্লের ভেতরই তৃতীয় উইকেট এনে দেন আরেক পেসার অভিষিক্ত খালেদ আহমেদ। তার বল চাঁদ বউস ক্যাচ দেন স্কয়ার লেগের ফিল্ডার তাওহীদ হৃদয়কে।
এরপর হেনরি নিকোলস ও টিম ব্লান্ডেল মিলে এগিয়ে নেন দলকে। তারা স্পিনও খেলছিলেন বেশ ভালো। শতরানের কাছে চলে যাওয়া জুটিটি ভেঙে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় উইকেট নেন খালেদ। ৬১ বলে ৪৯ রান করা নিকোলসের ক্যাচ নেন লিটন। এরপর টম ব্লান্ডেল ফেরেন হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত এক বলে। বাতাসে সুইং করা ইয়র্কারে তিনি বোল্ড করেন ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬৬ বলে ৬৮ রান করা কিউই ব্যাটারকে।
পরে কোলে ম্যাককোনকি নাসুম আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হলে দ্রুতই অলআউট হওয়ার শঙ্কায় ছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু তাদের হয়ে হাল ধরেন ইশ সোধি ও কাইল জেমিনসন। এ দুজনের ৩৯ রানের জুটিতে কিউইদের রান দুইশ ছাড়িয়েও যায় অনেকটা দূর। ২৮ বলে ২০ রান করে মাহেদী হাসানের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিলে জুটিটির ইতি ঘটে।
এরপরই ঘটে অভূতপূর্ব এক ঘটনা। ইশ সোধিকে নন স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট করেন হাসান মাহমুদ। টিভি আম্পায়ার দেখে নিশ্চিত হন সেটি। পরে সাজঘরের পথও ধরেন সোধি। কিন্তু এর মধ্যে আবার সোধিকে ফিরিয়ে আনেন অধিনায়ক লিটন। এই ঘটনার পর ১৯ রান আসে সোধির ব্যাট থেকে। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে অলআউট হওয়ার আগে কিউইদের রানও যায় আড়াইশ ছাড়িয়ে। পরে যেটির কাছাকাছিও যেতে পারেনি বাংলাদেশ।
বোলারদের পরীক্ষার দিনে ১০ ওভার করা মোস্তাফিজ ১ মেডেনসহ ৫৩ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন, তিনি মাঠ ছেড়েছেন অস্বস্তি নিয়ে। অভিষেকে তিন উইকেট পাওয়া খালেদ ৯ ওভার ২ বলে দিয়েছেন ৬০ রান। তিন উইকেট পাওয়া আরেক বোলার মাহেদী হাসান ১০ ওভারে ৪৫ রান দেন। এছাড়া একটি করে উইকেট পাওয়া হাসান ১০ ওভারে ৪৬ ও নাসুম সমান ওভারে দিয়েছেন ৪৪ রান।