পিরোজপুর প্রতিনিধি: পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় অবস্থিত একমাত্র নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রায় এক দশক অতিবাহিত হলেও অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু জনবল নিয়োগ দিলেও তারা নিয়মিত অফিসে আসেন না। তাদের নেই কোন কার্যক্রম। আর প্রাথমিক যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে তাও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তাদের যে কাঙ্ক্ষিত সেবা দৈনিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ঘূর্ণিঝড়ের (বিশেষ বিজ্ঞপ্তি), ভারী বর্ষণের সতর্কতা, দীর্ঘ মেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাস কোন সেবাই মিলছে না এই অফিস থেকে। স্থানীয়দের অভিযোগ এখানে আবহাওয়া অফিস থাকলেও সেখান থেকে তারা কোন সেবা পান না।
মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে পিরোজপুর-গাবখান চ্যানেল হয়ে ঢাকা যেতে যে রুটটি ব্যবহৃত হয় সে পথে কাউখালী একটি উল্লেখযোগ্য স্পট। কেননা কাউখালীর এ জায়গাটি থেকে দুটি নদী দুটি রুট সৃষ্টি করেছে। একটি স্বরুপকাঠীর সন্ধ্যা নদী হয়ে ঢাকা, অন্যটি গাবখান চ্যানেল দিয়ে বরিশাল হয়ে ঢাকা। ফলে এ নৌরুটের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে কাউখালী নৌবন্দর। আর একে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এখানে তৈরি হয়েছে এ অঞ্চলের একমাত্র ১ম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার, নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র। নির্মাণ কাজে প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ হলেও অফিসের যন্ত্রপাতির হিসেব এখনো অজানাই রয়ে গেছে। তবে স্থানীয়রা বলেছেন অফিসের লোকবল এবং কর্মকাণ্ড সবই অদৃশ্যমান।
কাউখালী উপজেলার কুমিয়ান এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, আমরা সবসময়ই এই আবহাওয়া অফিসের সামনে থেকে চলাফেরা করি। বছরের পর বছর ধরে এই অফিসের গেটে তালা বদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই। কখনোই এই অফিসের তালা খোলা হয় না। তবে অফিসের পিছনের গেট থেকে মাসের ভিতরে একবার অফিসের কর্মচারীরা আসে হাজিরা যাওয়ার জন্য।
কাউখালী উত্তর বাজার লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ খসরু বলেন, এই রুট থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নৌযান চলাচল করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট বিধায় এখানে এই আবহাওয়া অফিস টি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা না আসায় এ অফিস থেকে কোন সুফল পায় না স্থানীয় বাসিন্দারা।
এর আগে ২০১২ সালে মূল ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়, হস্তান্তর হয় ২০১৬ সালে। তবে গণপূর্ত বিভাগ ২০০৮ সালে ৯০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে এর নির্মাণ কাজ শুরু করে। আর জনবল নিয়োগ দেয়া হয় ২০১৮ সালে। নির্মাণের ৫ বছর পর আনসার নিয়োগ দেয়া হলেও ৬ বছরের মধ্যে কোন জনবল ওঠেনি সেখানে। অফিসের লোকদের সেখানে দেখা মেলে কালেভদ্রে। তারা মাসের মধ্যে একদিন হাজিরা দিয়ে পুরো মাসের বেতন তুলে আবার চলে যান। বহুদিন তাদের সাথে দেখা করতে গেলেও তাদের সাথে দেখা মেলেনি। তবে জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, কাউখালী নৌ আবহাওয়া অফিসের ব্যাপারে তার কিছু জানা ছিল না। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। আবহাওয়া অফিসের ব্যাপারে কোন অনিয়ম থাকলে তিনি খোঁজ নিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন।