নিজস্ব প্রতিবেদক : ডেঙ্গু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে বরিশালে। বিভাগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, মৃত্যুও হচ্ছে অনেক।
গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে (২৩ দিনে) বরিশালে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে সাতগুণ। এভাবে চলতে থাকলে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগকে অদূর ভবিষ্যতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৩৯। এদিন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন দুই হাজার ৬৭৯ জন। একই দিন পর্যন্ত বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৭৪৮ জন। এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ২৫ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ২৩ দিনে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৭৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। অর্থাৎ বছরের শুরু থেকে সাত মাসে যে পরিমাণে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার থেকে গত মাত্র ২৩ দিনে তার প্রায় দ্বিগুণ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে বছরের শুরু থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৭ মাসে যেখানে তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে, সেখানে ২৫ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ২৩ দিনে বিভাগে ২২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যা বছরের শুরুর সাত মাসের তুলনায় মৃত্যুর হার ৭ গুণের বেশি।
আবার গত ২৩ দিনের মধ্যে (৯ আগস্ট পর্যন্ত) ৪০৫ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া ২৩ দিনের বেশির ভাগ দিনই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা গড়ে আড়াই থেকে ৩ শত জনের উপরে ছিল।
আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় গড়ে বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোয় অবস্থানরত শুধু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী থাকার সংখ্যা হাজারের ওপর ছাড়িয়েছে।
জনবল না বাড়লে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ দাস।
তিনি বলেন, আমাদের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সবখানেই জনবল সংকট থাকলেও এখন পর্যন্ত আমরা শতভাগ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে অদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা শঙ্কিত। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হার অব্যাহত থাকলে কী হবে বোঝা যাচ্ছে না। জনবলের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, আশাকরি তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরও বলেন, হিসেব অনুযায়ী জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যে রকমই থাকুক না কেন, জুলাইয়ের শেষ দিক ও আগস্টের এখন পর্যন্ত প্রচুর রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হচ্ছে। তাদের সেবা নিশ্চিত করতে আমাদের লোকজনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি বিভাগজুড়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে লিফলেট বিতরণ ও মাইকে প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, বরিশালে এবারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। আর এটি মোকাবিলায় আমাদের সবার সচেতন হওয়া জরুরি। ডেঙ্গুসহ সব মশার বংশ বিস্তার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ নিয়ে সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের যে বার্তা সেটি আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিফলেট আকারে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করছি। সবাইকে সচেতন করাসহ নাগরিকদের সাথে আমরা কথা বলেছি।
সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, ঘরবাড়ি ও আঙ্গিনা সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশার বংশবিস্তার যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাইকে কাজ করতে হবে। আমরা জনসমাগমপূর্ণ এলাকাসহ বিদ্যালয়গুলোয় প্রচারণা চালাচ্ছি, এছাড়া নগরজুড়ে মাইকিংও করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় সরকারে প্রতিটি দপ্তরকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।