ধর্ম ডেস্ক: পবিত্র মাহে রমজানের সওগাতঃ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে আস সাওম হচ্ছে অন্যতম। সাওম বা সিয়াম শব্দটি আরবী এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা, ত্যাগ করা, আত্মসংযমী হওয়া, কঠোর সাধনা, অভিরাম প্রচেষ্টা করা, আত্মাকে বিশুদ্ধ করা। ইসলামী শরিয়াতের পরিভাষায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের মানসে রোজার নিয়তে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌনাচার, ও সকল প্রকার অশ্লীল অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকাকে সওম বা রোজা বলে।
আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসির (রঃ) বলেন, ইসলামের প্রথামিক যুগে তিনদিন রোজা রাখায় বিধান ছিল। পরবর্তীতে মহান আল্লাহ তায়ালা দ্বিতীয় হিজরী সনে রমজান মাসে রোজাকে ফরজ করেছেন। এ সর্ম্পকে মহান আল্লাহ ভায়ালা ইরশাদ করেন হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপরে রমজানের সিয়াম পালন ফরজ করা হল যেরকম ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা ২। ১৮:৩)
পবিত্র মাহে রমজানের ফজিলতঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ইরশাদ করেন, যখন রনজান মাস শুরু হয় তখন আকাশের রহমতের সকল দরজা খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের সমুদয় দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শৃংখলে আবদ্ধ করা হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
মহানবী (স:) আরো বলেন, যে রাত রমজান মাসের প্রথম রাত্রি হবে সেই রাতে আসমানের রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। একটি ও বন্ধ থাকে না। এই অবস্থায় রমাজানের শেষ তারিখ পর্যন্ত এরূপ খোলা থাকে। রমজানের রাত্রে যে মুমিন তারাবির নামাজ পড়বে তার প্রত্যেক রাকাতের পরিবর্তে আল্লাহ তায়ালা তাকে দেড় হাজার সাওয়াব দিবেন এবং তার জন্য জান্নাতে লাল ইয়াকুত পাথরের একটি অট্টালিকা তৈরী করবেন। এ অট্টালিকায় ঘাট হাজার দরজা থাকবে এবং প্রত্যেক দরজায় লাল ইয়াকুত মন্ডিত স্বর্নের এক একটি প্রাসাদ থাকবে। (বায়হাকী)
সুতরাং প্রত্যেক বয়স প্রাপ্ত সুস্থ মুসলমানের উপর সিয়াম পালন করা ফরজ। এ সর্ম্পকে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ রমজান মাস পাবে সে যেন অবশ্যই সিয়াম পালন করে। (সূরা আল বাকারা-২: ১৮৫) রোজা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ন ইবাদত। উপকারী ইসলামী তারবিয়াত, রোজাদারগণকে সিয়াম পানাহার, যৌনাচার, অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে এবং জিহ্বাকে আল্লাহ জিকির ও শুকুরে মগ্ন রাখে। এ সম্পর্কে মহানবী (স:) বলেন- রোজা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ যা মানুষকে দুর্নীতি সমাজ বিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী, এবং তাগুতের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
১ম তারাবিহ: পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস মাহে রমজান। যাতে রয়েছে মানব জাতির কল্যান, সত্য পথের সন্ধান। পবিত্র কোরআনে ১১৪টি সূরা ত্রিশটি পারায় বিভক্ত। আমাদের দেশে বেশীর ভাগ মসজিদে ১ম রমজানের তারাবিহ থেকে ২৭শে তারাবিহতে খতমে কুরআন তিলাওয়াত হয়ে থাকে। প্রথম তারাবিহতে সাধারনত যা পঠিত হয়েছে ১নং সূরা আল ফাতিহা সাত আয়াত বিশিষ্ট এবং ২নং সূরা আলবাকারার ২০৩ আয়াত বা দেড় পারা পর্যন্ত। এ তিলাওয়াতে কালামের সারসংক্ষেপ হচ্ছে সকল প্রসংশা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি অসীম দয়াময় ও মেহেরবান এবং বিচার দিবসের মালিক। হে মহান প্রভু তুমি আমাদেরকে সহজ সরল সঠিক পথ দেখাও। (সূরা আল ফাতিহা: ১-৩)
মহান আল্লাহ তায়ালা বিশ্ববাসীর নিকট চ্যালেঞ্জ করে বলতেছেন যে, পবিত্র কোরআন আল্লাহর বাণী। এর মধ্যে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এটা মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত স্বরূপ। (আল বাকারা-২:২)
রমজানে রোজা ফরজ করা হয়েছে তবে অসুস্থ ব্যক্তিবর্গ ও মুসাফিরগণ রমজানের রোজা পালনে অপারগ হলে পরবর্তীতে কাযা করে নিবে। (আল বাকারা-২: ১৮৩)
আর তোমরা একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায় অবৈধ ভাবে আত্মসাত করনা। আবার জেনে বুঝে অন্যায় ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করার জন্যে এবং একাংশকে বিচারকদের সামনে ঘুষ কিংবা উপঢৌকন হিসেবেও পেশ করনা। (আল বাকারা-২/১৮৮)
লেখা: মাওলানা মোহাম্মদ আমির হোসেন তালুকদার, অধ্যক্ষ, কাউনিয়া বালিকা আলিম মডেল মাদ্রাসা, বরিশাল।
…… চলবে