নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এবং একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার লোগো ব্যবহার করে “জব ইন বরিশাল” নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে তাওহীদ নামে প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। চক্রটি বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো ওই গ্রুপে প্রচার করে প্রতারণা করে আসছিল। সোমবার বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার লোগো এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পুরোনো লোগো ব্যবহার করে ছয়টি পদের জন্য একটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করেন তাওহীদ। এতে বরিশাল সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নামে একটি জাল সইও ব্যবহার করা হয়। ভুয়া এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি গত মার্চ মাসে “জব ইন বরিশাল” নামের ফেসবুক গ্রুপে সিটি কর্পোরেশনের ভুয়া আইডি ব্যবহার করে প্রচার করা হয়। আগ্রহী প্রার্থীদের একটি ই-মেইল ঠিকানায় সিভি পাঠাতে বলা হয়। বিষয়টি বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, বিষয়টি জানার পর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের সঙ্গে মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ইউনিট যৌথভাবে কাজ শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকারীকে শনাক্ত করার পাশাপাশি তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ৮ জুন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) বিপ্লব মিস্ত্রির নেতৃত্বে একটি দল ময়মনসিংহে যায়। পরে দলটি ময়মনসিংহের বলাশপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. তাওহীদকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার তাওহীদ ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের ঈদগাহ খাগাটিপাড়া এলাকার নায়েব আলীর ছেলে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাওহীদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া তিনি বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জাল সই দিয়ে ছয়টি করে মোট ১২টি পদের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা জানিয়েছেন। আর এসবের মাধ্যমে প্রতারক তাওহীদ চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর আগে ফেসবুকে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নামে প্রতারণা করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাওহীদ।
মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, এখন পর্যন্ত তার ছয়টি সিমের একটিতে লাখ টাকার মতো লেনদেনের তথ্য আমাদের কাছে আছে। বাকি সিমসহ অন্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর তার সঙ্গে কেউ জড়িত কি না, সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক জানান, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার মামলায় তাওহীদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তারের আগে চক্রটির মূল হোতা তাওহীদ দাবি করেন, চাকরির নামে নিজে প্রতারিত হয়ে প্রতারণার এ পথ তিনিও বেছে নিয়েছেন। জানা গেছে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিক বিভাগে ডিপ্লোমা শেষ করেছেন তাওহীদ।