ডেস্ক রিপোর্ট : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে কেউ কেউ চায় এখানে তাদের এমন একটা সরকার আসুক, যারা তাদের পদলেহন করবে অর্থাৎ তারা তাদের পদলেহনকারী সরকার চায়।
বুধবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় বড় দেশ মোড়লিপানা সব জায়গায় করে থাকে। এরা যাদের বন্ধু হয় তাদের আর শত্রু লাগে না। ইউক্রেন বন্ধু হয়েছিল, আজকে সেখানে অবস্থাটা কী দাঁড়িয়েছে? সেখানকার মেয়েরা, বাচ্চারা কষ্ট পাচ্ছে? এমনই বন্ধুত্ব যে, সেই বন্ধুত্বের কারণে তাদের দেশও শেষ। সেখানকার নারী-শিশুরা মানবেতর জীবন-যাপন করে। এটা হলো বাস্তবতা।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলণ কেন্দ্রে আয়োজিত এ আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন-ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
মহানগগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন-ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সহসভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, উত্তরের সহসভাপতি সাদেক খান এমপি, দক্ষিণের সহসভাপতি ডা. দিলীপ রায়, সাজেদা চৌধুরী, মেজবাহুর রহমান রতন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোর্শেদ কামাল, উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, উত্তরের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহেরুন নেসা মেরি, উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল আলম, দক্ষিণের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির ও আখতার হোসেন প্রমূখ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারের কথা আসে। গুম-খুনের কথা বলে। আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারী খুনি রাশেদ আমেরিকায়। ফেরত চাই। বার বার অনুরোধের পরেও সেই খুনিকে তারা লালন-পালন করে কেন? আরেকজন নূর, কানাডায়। তাকেও ফেরত দেয় না। খুনি ডালিম-রশিদ পাকিস্তানে, কখনো লিবিয়া যায়। তাদের খোঁজ তারা দেয় না। মোসলেউদ্দিনের খোঁজও দেয় না। বাকিদের রায় কার্যকর হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি অর্থনৈতিকভাবে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ। রক্ত দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর আজকে আমাদের শুনতে হয়, গণতন্ত্র খোঁজ করে। ভোটের অধিকার খোঁজ করে। কাজেই ভোটের যে অবস্থা ছিল সেটা তো তারা দেখেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার অবাক লাগে, যখন বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি। যাদের জন্মই হয়েছে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। যাদের সৃষ্টিই হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত থেকে। যাদের যাত্রা শুরু হয়েছে জনগনের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে। কারচুপির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তাদের মুখে আর যাই হোক গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। তাদের (বিএনপি) কিছু প্রভু আছে। তারা একইসঙ্গে সুর মেলায় বাংলাদেশে না কী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে। আমার প্রশ্ন সেইসব লোকদের কাছে- যারা একেবারে গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ায় বাংলাদেশে, যখন জিয়াউর রহমান জাতির পিতাকে হত্যা করে মার্শাল ল জারী করে ক্ষমতা দখল করেছিল বা যখন জেনারেল এরশাদ মার্শাল ল জারী করে ক্ষমতা দখল করেছিল। তখন আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, কই তখন তো তাদের (বিদেশী) সেই চেতনা দেখি নাই? তখনো তো তাদের কথা শুনিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুকের রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত পাক- এই স্লোগান দিয়েছে আমার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী, তাদের রক্ত। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রক্ত। আওয়ামী লীগই তো রক্ত দিয়েছে। অথচ আজকে শুনতে হয়, যে আমাদের হাতে না কী গণতন্ত্রই সুরক্ষিত না। সুরক্ষিত হলো মিলিটারী ডিকটেটর, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী আর চুরি-ডাকাতি করে, লুটপাট করে, মানি লন্ডারিং করে যারা ছিল, জনগণ যাদেরকে আন্দোলনের মাধ্যমে বিতাড়িত করেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত করেছি। আজকে তাদেরকে তারা (বিদেশীরা) খুঁজে বের করে গণতন্ত্রের কথা বলার জন্য। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা শ্রমিকের অর্থ আত্মসাত করে, যারা কৃষকের ভাগ্য কেড়ে নেয়, গুলি করে হত্যা করে, শ্রমিক হত্যা করে, যারা শত শত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে। যারা এদেশের গণতন্ত্রকেই কখনো প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়নি, তারা এখন গণতন্ত্রের ধ্বজাধারি হয়ে গেছে। আর আমাদের কিছু আছে, বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করে, সেইসব বুদ্ধিজীবি এদের (বিএনপি) পক্ষে কথা বলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কত পরিমাণ অর্থসম্পদ তারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে যে সেই টাকা এখন বিদেশে বসে খরচ করে। বিদেশে বসে সেই টাকা খরচ করে এখানে আবার অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। আর গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী কিছু আছে, কয়েকটি দেশ, তারাও নাকি শুধু গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ায়।
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মনে হয়েছিল এই হত্যাকাণ্ডটি মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রতিশোধ নেয়া হয়েছিল। খুনি মোশতাক ও তার দোসর ছিল জিয়াউর রহমান। খুনি জিয়াউর রহমান জড়িত না থাকলে মোশতাক কখনো সাহস পেতো না। জিয়া যে খুনের সঙ্গে জড়িত তা প্রমাণিত সত্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই দেশে গুমের সংস্কৃতি চালু করেছিল জিয়াউর রহমান। যখনই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, তখনই হত্যা, গুম ও খুনের রাজনীতি শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, পাপ-বাবকেও ছাড়ে না। যেভাবে জিয়াউর রহমান জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল। ঠিক সেইভাবে তাকেও হত্যা হতে হয়েছিল। তার লাশের কোনো খবর নাই। সংসদ ভবনের সঙ্গে যে কবরটা…। সেখানে জিয়ার কোনো লাশ নেই। জেনারেল এরশাদ এ কথাটা বলে গেছেন। তিনি বলেন, আমি দেখি বিএনপি নেতারা গিয়ে সেখানেই ফুল দেয়। কিন্তু কাকে দিচ্ছে তারা ফুল, সেটা কী তারা জানে?
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি। মা-বাবা-ভাই হারিয়েছি। আমাদের মানবাধিকার কোথায়? আমাদের যে মানবাধিকার আছে, সেই কথা তো তারা ভাবেনা! আমরা যে বিচার পাইনি। এই বিচারের জন্য ৩৫ বছর অপক্ষো করতে হয়েছে। ৩৫ বছর পর মা-বাবা-ভাই হত্যার বিচার পেয়েছি। কেন আমাদের কী বিচার পাওয়ার অদিকার ছিল না? আমরা কী এদেশের নাগরিক না?
সূত্র: বাসস 

 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                