ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥ ঝালকাঠি জেলার পরিবেশ, কৃষি এবং জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকির মুখে ফেলেছে জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা। সরকারি আইন অমান্য করে বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকা, গ্রামীণ সড়ক, কৃষিজমি এবং নদীতীরের পাশে এসব ভাটা বছরের পর বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার মোট ৪২টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ১৯টি, বাকি ২২টি পুরোপুরি অবৈধ।
এসবি-১, এসবি-২, সেভেন স্টার, এমসিবি, জিজিবি—এমন ভাটাগুলোর বেশিরভাগই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঠিক পাশে গড়ে উঠেছে। কাঁঠালিয়া উপজেলার রঘুয়ারদড়িচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের দুটি এসবি ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার কালি ও ধুলা সরাসরি উঠে যাচ্ছে ক্লাসরুমে। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা, অ্যালার্জির মতো সমস্যা নিয়ে ক্লাস করছে। অভিভাবকদের ভাষায়—“শিশুদের নিয়ে আমরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন।”
অবৈধ ভাটার জন্য নির্বিচারে কেটে নেওয়া হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর মাটি ও নদীর তীর। এতে জমির উৎপাদনক্ষমতা দ্রুত কমছে, কৃষকেরা দিশেহারা। তারা জানান, যেসব জমিতে বছরে তিন ফসল হতো এখন সেই জমি শক্ত, অনুর্বর এবং কমফলনশীল হয়ে পড়েছে।
আইন অনুযায়ী ভাটায় কাঠ পোড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু ঝালকাঠির অধিকাংশ ভাটায় প্রকাশ্যে জঙ্গলের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, যা বন উজাড়ের পাশাপাশি বায়ুদূষণকে মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি করছে। পানি ছিটানো না হওয়ায় চারপাশে ক্রমাগত ধুলা উড়ছে—এতে শিশু, প্রবীণ এবং গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।
গ্রামীণ সড়কের পাশে ভাটা স্থাপনের কারণে ট্রলি ও ট্রাকে ইট বহনের চাপ এলজিইডির রাস্তা দ্রুত নষ্ট করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, “মেরামতের আগেই রাস্তা ভেঙে যায়।”
এদিকে অবৈধতার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ভাটা মালিকরা সাংবাদিকদের হুমকি বা ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন। নিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের জেলা সভাপতি আককাস সিকদার বলেন, “প্রশাসনের দুর্বল নজরদারির কারণেই ভাটাগুলো দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।”
জেলা প্রশাসক জানান, খুব শিগগিরই অভিযান পরিচালিত হবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, স্থায়ী তদারকি ও কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।
