ডেস্ক রিপোর্ট: উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে দুবাইভিত্তিক মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম মডেলের প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই) হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমটিএফইর ফাঁদে পা দিয়ে দেশের প্রায় ৮ লাখ মানুষ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন।
রাতারাতি ধনী হওয়ার ফাঁদে পা দিয়ে একটি বিদেশি অ্যাপে বিনিয়োগ করে লাখ লাখ গ্রাহকের আহাজারি চলছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এমটিএফই’র প্রতারণা ও দুদকের ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ যদি কেউ করে তাহলে আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এমনিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয়ে থাকলে খতিয়ে দেখা হবে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমটিএফই প্রতারণা নিয়ে দুদকের বাড়তি নজরের বিষয়টি আগেও জানা গিয়েছিল। গত ১৯ আগস্ট জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এমটিএফইর মতো উচ্চ প্রযুক্তির দুর্নীতি শনাক্ত ও প্রতিরোধে সহযোগিতা চেয়েছিল দুদক।
সংস্থাটির মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সি, ডিজিটাল ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট ও সাইবার ক্রাইমের মতো হাই টেকনিক্যাল কাজগুলোর বিষয়ে দুদক কর্মকর্তাদের যথেষ্ট জ্ঞান নেই। শুধু দুদক নয়, অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানেরই উচ্চপ্রযুক্তি সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। জাইকা চাইলে সে বিষয়ে দুদককে সহায়তা করতে পারে। গোপনীয়তার মধ্যে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাইকা বাংলাদেশ অফিসের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আলিমুল হাসান ও সিনিয়র উপদেষ্টা তাকিন্দা নবুহিসা উপস্থিত ছিলেন।
দুবাইভিত্তিক এমটিএফই মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম মডেলে ব্যবসা করত। হঠাৎ করে গত ১৬ আগস্ট বন্ধ হয়ে যায় এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতারিত হওয়ার পর গ্রাহকরা তথাকথিত টিম লিডারদের দেখা পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। তবে ঠিক কত মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন তার কোনো হিসাব নেই কারও কাছে। বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশই যুবক। সারাদেশেই বিছানো ছিল এই প্রতারক চক্রের জাল।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা জানান, এমটিএফই হচ্ছে দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম মডেলে ব্যবসা করত প্রতিষ্ঠানটি। এখানে বিনিয়োগকারীদের একটি অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। বিনিয়োগকারী যার মাধ্যমে বিনিয়োগ করবেন তিনিও এর কমিশন পাবেন। কারও অধীনে ১০০ বিনিয়োগকারী থাকলে তিনি ‘সিইও’ হিসেবে গণ্য হবেন। মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সিতে (যেমন বিটকয়েন) বিনিয়োগ করতে হয়। যদিও ক্রিপ্টো ট্রেডিং বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।
বিনিয়োগকারী বেশ কয়েক জনের দেওয়া তথ্যমতে, টিম লিডাররা বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করে শুরুতে গ্রাহকদের তিন হাজার টাকায় এমটিএফই প্ল্যাটফর্মে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে দিত। প্রতিটি অ্যাকাউন্টে ‘রেফার’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে টিম লিডারের হিসাব বা আইডি নম্বর। পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগকারীরা এই অ্যাপে ডলার জমা করতেন।
তারা জানায়, এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা করে লাভ পাওয়া যাবে। এই ফাঁদে পড়েই অনেকে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু সম্প্রতি বিনিয়োগকারীরা টাকা তুলতে পারছিলেন না, তখন বলা হয় সফটওয়্যার আপডেটের কথা। হঠাৎ করেই বিনিয়োগকারীদের অ্যাপের অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ডলারের বিপরীতে সমপরিমাণ দেনা দেখাতে থাকে। তারা নিজেদের অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারছিলেন না। পরে অ্যাপটি উধাও হয়ে যায়।
এদিকে এমটিএফই’র কাছে প্রতারিত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি মামলা করেছেন প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা। এরই মধ্যে এমটিএফই অ্যাপ ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে এক মামলায় রাজশাহী থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রতারণা করে আলোচিত এমটিএফই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় শেয়ার, ডলার, ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচার কানাডা ও দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করত।
মূলত প্লে-স্টোর ও অ্যাপস্টোর থেকে অ্যাপ নামিয়ে তাদের সদস্য হতে হয়। এ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা দুবাই প্রবাসী বাংলাদেশি মাসুদ আল ইসলাম। শুরুতে অন্তত ২৬ ডলার বা সমপরিমাণের টাকা বিনিয়োগ করতে হতো এ প্রতিষ্ঠানে। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে এই টাকা জমা দেওয়া যেত।