এইচ.এম.এ রাতুল : বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে একের পর এক মাদক কারবারী আটক ও মাদক উদ্ধার হলেও থেমে নেই মাদক কারবারীরা। বরং কৌশল পাল্টে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কারবার। পুলিশের অভিযানে কোনঠাসা হয়ে উল্টো পুলিশের উপর হামলাও করছে তারা। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের অভিযানে চিহ্নিত মাদক কারবারী আটক ও বিপুল মাদকদ্রব্য উদ্ধার হওয়ায় সচেতন নাগরিকরা যেমন স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলছে, অপরদিকে পুলিশের উপর হামলা ও প্রতিদিন মাদক উদ্ধার হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন তারা। তবে জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের এলাকা ছাড়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ লক্ষ্যে বিশেষ অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে কোতয়ালী মডেল থানার একটি বিশেষ অভিযানিক নগরীর ফলপট্টি এলাকার বিসমিল্লাহ আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে এক হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই মাদক কারবারীকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন বাউফল উপজেলার রাজাপুর এলাকার মো. বাবুল (৪২) ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ভাতশালা এলাকার সজল ঘরামী (৩২)।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিএমপি বন্দর থানাধীন লাহারহাট এলাকা থেকে ২ কেজি গাঁজাসহ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নগরীর পলাশপুরের বাসিন্দা মৃত আব্দুল আজিজ বেপারীর ছেলে কামাল বেপারী (৩০) কে আটক করে বন্দর থানা পুলিশ। একই দিন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস সামনে থেকে ৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থানাধীন মাতারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ধানু মিয়ার পুত্র ওমর ফারুক (৪১) কে আটক করা হয়।
১৩ সেপ্টেম্বর রাতে অভিযান চালিয়ে নগরীর ৫নং ওয়ার্ড পলাশপুর এলাকা থেকে ১ কেজি গাঁজাসহ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মানিক মোল্লা (৪২) কে আটক করে পুলিশ। একই দিন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের অভিযানে রহমতপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস এলাকা থেকে বানারীপাড়া থানার সৈয়দকাঠি গ্রামের আফসার হাওলাদারের পুত্র মো. নিলয় হাওলাদার (২৬) কে আটক করা হয়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ বানারীপাড়া থানাধীন সলিয়াবাকপুর গ্রামের মৃত পারভেজ তালুকদারের পুত্র মো. জাহিদ তালুকদার (২২) কে আটক করে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।
এছাড়া ৩ সেপ্টেম্বর বাউফল থানাধীন আদাবাড়িয়া গ্রামের মো. ফকুর উদ্দিন খন্দকারের পুত্র মো. লিটন খন্দকারকে আড়াই কেজি গাঁজাসহ আটক করে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।
২ সেপ্টেম্বর বন্দর থানা পুলিশের অভিযানে বিশারদ গ্রামের মো. আফজাল হোসেনের স্ত্রী নারী মাদক ব্যবসায়ী রোজিনা (২৭) কে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ২ কেজি গাঁজা ও ৩০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন নগরীর পলাশপুরে অভিযানে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত হয়েছেন কাউনিয়া থানা পুলিশের দুই কর্মকর্তা। আহতরা হলেন কাউনিয়া থানার এসআই গোবিন্দ ও এএসআই কামরুল। তবে পুলিশ অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে ৩ হাজার ৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এ সময় পলাশপুর এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রিপন সরদার (৩৫) সহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ।
এছাড়া জেলা আইন শৃঙ্খলা সভার তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৮২টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে মাদকদ্রব্য ৮৬টি। আর আগষ্ট মাসে ১৫৪টি অপরাধের মধ্যে মাদকদ্রব্য ৭৮টি।
এদিকে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে এখন আর প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা না হলেও গোপনে বিভিন্ন কৌশলে মাদক বিক্রি চলছে বলে জানা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন বয়সী নারীরাও জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়। বরিশাল নগরীর মাদকের আখড়াখ্যাত পলাশপুর, কেডিসি, কাউনিয়া ছাড়াও আশেপাশের এলাকা মিলিয়ে রয়েছে শতাধিক মাদক ব্যবসার হটস্পট।
বিভিন্ন সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, চিহ্নিত এলাকাগুলোতে পুলিশের তৎপরতার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টানোর সাথে নতুন নতুন এলাকা বেছে নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, রায়পাশা কড়াপুরের সোনামিয়ার পোল, কালিজিরা নদীর পাড়, সোনারগাও টেক্সটাইল এলাকা, চরকাউয়া, বিশ^বিদ্যালয় এলাকা, কাশিপুর ট্রাক স্ট্যান্ড, রুইয়ারপোল, ইছাকাঠী কলোনী, কাউনিয়া মতাসার, বাঘিয়া, কাউনিয়া হাওলাদার সড়ক, নতুন বাজার বস্তি, আমিরগঞ্জ বাজার, কাশিপুর বিল্ববাড়ি, নিলখোলার পাড়, বাটনা, লাকুটিয়া মোহনগঞ্জ বাজার, সারশি, জাম্বুরাতলা, কাউনিয়া বরফকল ও বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকা। ওই সব এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা তৈরি করছে নতুন নতুন মাদকসেবী। বিশেষ করে উঠতী বয়সী যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে মাদকের নেশায়। আর নেশার টাকা জোগাড় করতে নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এখনই মাদকের আধিক্য বন্ধ না করা গেলে অচিরেই শেষ হয়ে যাবে শত শত যুবসমাজের জীবন।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা শাহ্ সাজেদা বলেন, মাদকের বিস্তাররোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সকলকে সচেতন হতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশল পাল্টানোর বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশকেও তাদের অভিযানের কৌশল পাল্টাতে হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) হামিদুল আলম বিপিএম, পিপিএম সেবা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে পুলিশ। তবে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হলে সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, মাদক নির্মূলে বিএমপি পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। যা চলমান থাকবে। এসময় তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের এলাকার ছাড়ারও হুশিয়ারী দেন।