বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি : ফল ও সবজি হিসেবে পেঁপে এখন বেশ জনপ্রিয়। শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো ফলটি। এখন বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। বানিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষে চমক সৃষ্টি করেছেন বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বায়লাখালি গ্রামের প্রবাসী আবু বকর সিদ্দিক সুমন। ২০২৩ সালে শুধু পেঁপে চারা বিক্রি করেছেন ৫৫ লাখ টাকা। চাড়া বিক্রি থেকে লাভ করেছেন ৬-৭ লাখ টাকা। এবছর তিনি কাঁচা ও পাকা পেঁপে বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা লাভ করবেন বলে আশাবাদী। তার পাশাপাশি দুটি ঘেরে ১হাজার টি ফলসহ পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে ৫-৮ মন পেঁপে বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
প্রতি মন কাঁচা পেঁপে সময় ভেদে ৬০০-১৪০০ টাকা বিক্রি করেছেন। এছাড়া ১ হাজার মন পাকা পেঁপে সর্বনিন্ম ২৫শত টাকা দরে বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিদ্দিক জানান, কাজের সুবাদে তিনি ২২ টি দেশ ঘুরে এসে নিজ এলাকায় পেঁপে চাষে সফল হয়েছেন। প্রথমে তিনি জাত নির্বাচনে ভুল করায় ব্যার্থ হলেও ২০২২ সালের শেষের দিকে এসে সফল হয়েছেন। তার বাগানে শাহী,কাশ্মিরি, টপ লেডি জাতের সহগ্রাধিক পূর্ণ বয়স্ক পেঁপে গাছ রয়েছে। বর্তমানে এক একর জমিতে দুইটি ঘেরের পাড়ে সারি সারি পেঁপে গাছ শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি গাছের গোরা থেকে মাথা পর্যন্ত ঝুলে আছে অসংখ্য পেঁপে। তিনি সর্বোচ্চ ৫ কেজি ওজনের পেঁপে সংগ্রহ করছেন। এপ্রিল মাসে চারা লাগিয়েছেন জুলাইয়ের শেষের দিকে বিক্রির উপযোগী হয়েছে। এখন প্রতিদিনই বাগান থেকে পেঁপে বাজারজাত করা হচ্ছে। এছাড়া তিনি আরো একটি ঘের লিজ নিয়েছেন। যেখানে হাতে কলমে বেকারদের ফ্রী প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।
পাশাপাশি পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি সহযোগী ফসল হিসাবে ৮শত উন্নত জাতের লাউয়ের মাদা তৈরি করেছেন। যা ঘেরের মধ্যে করা ঝাকায় বেড়ে উঠেছে। লাউগাছে প্রচুর ফুল ও ফল ধরেছে। সেখান থেকে ২ লাখ টাকার বেশি লাউ বিক্রি হবে বলে ধারনা তার। তার দুইটি ঘেরে বর্তমানে ৪ জন শ্রমিক শ্রম দিয়ে আসছে।
সফল এই পেঁপে চাষি আবু বকর সিদ্দিকী সুমন এখন এলাকার (মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় ফ্রি পেঁপে চারা লাগিয়ে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। উন্নত জাতের এই সব পেঁপে চারা প্রতিবেশীদের বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটানোয় উদ্বুদ্ধ করে নজির স্থাপন করেছেন। নিজের ফলানো পেঁপে বিনামূল্যে সবজি হিসাবে এলাকার এতিমখানায়ও দিচ্ছেন তিনি। তার কাছ থেকে চারা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই বাগান তৈরি করে সফল হয়েছেন।
বাবুগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ’র শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, তিনি আবু বকর সিদ্দিক এর কাছ থেকে উন্নত জাতের চারা সংগ্রহ করে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী লাগিয়ে সফলতা পেয়েছেন। বাগানের পেঁপে বাজারজাত করে ব্যাপক সারা পাচ্ছেন।
আবু বকর সিদ্দিকী সুমন বলেন, আমি এখন এলাকার বেকার ও শিক্ষার্থীদের পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাজ করছি। একজন শিক্ষার্থী যদি লেখা পড়ার পাশাপাশি মাত্র ২৫ টি পেঁপে গাছ লাগায় এবং যতœ করে। ২৫ টি পেঁপে গাছ থেকে সিজনে ১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এধরণের উদ্যোক্তা থাকলে আমি নিজে সময় ও শ্রম দিয়ে সফলতা অর্জনে সহযোগীতা করবো। তবে বাগান করার আগে অবশ্যই জাত নির্বাচন ও সঠিক জাতের চারা রোপন করে পরিচর্যা করলেই সফলতা অনিবার্য।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, আমি ও জেলা কৃষি কর্মকর্তারা তার বাগান পরিদর্শন করেছি। তিনি পেঁপে চাষে সফল উদ্যোক্তা। তাকে অনুকরণ করে অনেকেই পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।