কলাপাড়া প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় দালাল ছাড়া মিলছে না পল্লী বিদ্যুৎ সেবা। গ্রাহকরা সরাসরি বিদ্যুৎ সেবা নিতে গেলে অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস। দালালের মাধ্যমে নতুন সংযোগ নিতে সময় লাগে ১৫-২০ দিন। এতে গ্রাহককে গুনতে হয় সংযোগ প্রতি ৩-৫ হাজার টাকা। যেখানে সরকারি ফি এবং আবেদনসহ সাড়ে ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা খরচ হওয়ার কথা।
বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দালাল চক্রের মাধ্যমে চলছে অর্থ অঘোষিত এমন বাণিজ্য। সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের অসহায় গ্রাহকরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটা ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়ন‘ কর্তৃপক্ষের এ প্রতিপাদ্য বিষয়টাকে কাজে লাগিয়ে কুয়াকাটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নিয়ন্ত্রণাধীণ দালালরা টাকার টাকার পাহাড় গড়ছে। আর এতে সহযোগিতা করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা।
গ্রাহকরা জানান, কুয়াকাটার যেসকল বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি, সে সকল বাড়ির লোক সংযোগ নিতে কুয়াকাটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের (এজিএম) এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মোশাররফ হোসেনের কাছে যান। সেখানে তার কাছ থেকে কোন সু পরামর্শ ও সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে দালালের কাছে। আর দালালের কাছে কোন মিটারের জন্য গেলে প্রকার ভেদে দিতে হয় তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। দালাল ছাড়া সেবা নিতে গেলে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। বাধ্য হয়ে যেতে হয় দালালদের কাছে।
এসব দালাল চক্রের সাথে জরিত রয়েছে এজিএম, সংশ্লিষ্ট অফিসের ইনচার্জ, লাইনম্যানরা। নতুন সংযোগ প্রতি ধার্যকৃত একটি অংশ তাদের দিতে হয় এমন অভিযোগ একাধিক গ্রাহকদের।
জানাগেছে, কুয়াকাটা সাব-জোনাল অফিসের আওতাধীন শুধু মাত্র লতাচাপলী ইউনিয়নে এরকম দালাল রয়েছে ১০ থেকে ১২জন। এছাড়া কুয়াকাটা পৌরসভা ও পার্শবর্তী ইউনিয়নের জন্য আরো অনেক দালালচক্রতো আছেই।
অভিযোগ রয়েছে,দালালের মাধ্যমে মিটার পেতে কোন রকম কাগজ দিলেই হচ্ছে, আর দালাল ছাড়া গেলে এই কাগজ, সেই কাগজ ইত্যাদির বাহানা। অপরদিকে অনলাইনে ফরম পূরণ করে মিটার পেতে সময় লাগে প্রায় এক থেকে দেড় মাস। কোন কোন ক্ষেত্রে তিন মাসও লেগে যায়।
এছাড়া সংযোগকৃত লাইনে কোন ধরণের সমস্যা হলে অফিসে যোগাযোগ করলে তিন চার দিন পরে অফিস থেকে লোক এসে ঠিক করে দেন। আবার অনেক সময় ওই সকল দালাল পাঠিয়ে ঠিক করে দেন, সেখানে দিতে হয় তাদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ।
ভুক্তভোগি গ্রাহক নাজমা, রিপা বলেন, আমাদের বাসায় কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ ছিল না। বিষয়টি কুয়াকাটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জানালে তারা চার দিন পরে অফিসের বাহিরের লোক পাঠিয়ে সংযোগ ঠিক করে দেন। এতে আমাদের দু‘টি পরিবারের ফ্রিজে থাকা মাছ, মাংস নষ্ট হয়ে যায়। তাতে আমাদের প্রায় বিশ হাজার টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে যায়।
গ্রাহক আবুল কালাম বলেন, আমার বাসার বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা দেখা দিলে কুয়াকাটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সমাধান পাইনি। পরে স্থানীয় সংবাদ কর্মীর সাথে আলাপ করলে বিষয়টি সমাধান হয়। তিন দিন পর সমস্যা সমাধান হওয়ায় আমার ফ্রিজের মাছ, মাংসের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।
ভুক্তভোগি মিজান বলেন, যখন আমরা কলাপাড়া উপজেলাধীন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের আওতাধীন ছিলাম, তখন মহিপুরে একটি অভিযোগ কেন্দ্র ছিল, সেখানে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কয়েকজন লাইনম্যান ছিল, তখন আমরা কুয়াকাটা অফিসের চেয়েও ভালো সেবা পেয়েছি।
কুয়াকাটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম মো: মোসারেফ হোসেন বলেন, এখানে কোন দালালচক্র নেই, মিটারের জন্য আবেদন করতে হয় অনলাইনে। আবেদন পাস হলেই সংযোগ দিয়ে দেয়া হয়। আর মিটার নেয়া গ্রাহক কোন অভিযোগ করলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্হা নেয়া হয়।
এ বিষয় পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহা ব্যবস্থাপক তুষার কান্তি মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, দালালের কাছে না গিয়ে অনলাইনে ফরম পূরণ করলে মিটারের ব্যবস্থা হবে। আর সংযোগে সমস্যা হলে অফিসে অবগত করলে তারা সমাধান করবে। আর না করলে এধরণের অভিযোগ থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অভিযোগকারীদের তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।