এইচ.এম.এ রাতুল: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের অনেক নির্বাচনী এলাকার মতো পিরোজপুর জেলার ৩টি সংসদীয় আসনেও নৌকার বিপরীতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে ঈগল। প্রতিটি আসনেই ঈগল শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে স্থানীয় ভোটাররা ধারণা করছেন। ঈগলের দাপটের কারণে কোন কোন এলাকায় ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে।
পিরোজপুরের তিনটি নির্বাচনী এলাকায় এখন বইছে ভোট উৎসবের হাওয়া। পিরোজপুর সদরসহ সব উপজেলা সদর থেকে গ্রাম্য বাজার পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চলছে মিছিল মিটিং। পিরোজপুরের তিনটি সংসদীয় আসনে মোট ২৫ জন বৈধ প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৯ জন। তিনটি আসনে ছয়জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
এরমধ্যে পিরোজপুর-১ ও ২ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই আসনের ফলাফল কি হবে স্থানীয় ভোটাররা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। অপরদিকে পিরোজপুর-৩ আসনে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় ঈগলের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।
জেলার ৯ লাখ ৬৯ হাজার ১৩৮ ভোটারের মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫১১ জন ভোটার নিয়ে পিরোজপুর-১ আসন। বাকী অর্ধেক ভোটার নিয়ে পিরোজপুর-২ ও পিরোজপুর-৩ আসন গঠিত হয়। এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে ওই আসন পুনঃবিন্যাস করে চলতি বছর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। নতুন আসন বিন্যাসে ভোটার সংখ্যার বৈসম্য কিছুটা কমেছে। এবারে স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) পিরোজপুর-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৯৫ জন। এ বিন্যাসে সন্তুষ্ট হতে না পেরে পিরোজপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পক্ষ থেকে হাই কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।
পিরোজপুর ১:
পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-ইন্দুরকানি এই তিনটি উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের পিরোজপুর-১ নির্বাচনী এলাকা । এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তবে গতবারের মতো এবার তার জয়লাভ অতটা সহজ হবে না। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ. কে. এম আউয়াল। পিরোজপুর সদর তার নিজ এলাকা। পিরোজপুর জেলায় তার রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস। তাই এই আসনে আউয়ালের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তার রয়েছে বিশাল ভোটব্যাঙ্ক। পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগে তার একচ্ছত্র আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এবার দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তিনি নির্বাচনে জয়লাভের জন্য মোটেই ছেড়ে কথা বলবেন না। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ আউয়ালের পক্ষে রাস্তায় নেমেছে। তারা আওয়ালের পক্ষে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষে জোরালোভাবে নেমেছেন।
অপরদিকে নৌকার প্রার্থী ও মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম গত পাঁচ বছর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভেতরে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারেননি। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একাংশ শ.ম রেজাউল করিমের সঙ্গে রয়েছেন। তারা রেজাউল করিমের পক্ষে মিছিল মিটিং করছেন এবং মানুষের কাছে ভোট চাইছেন। কিন্তু এদের সংখ্যাটা কম। নাজিরপুরের দিকে আবার আউয়ালের চেয়ে শ. ম রেজাউলের অবস্থান কিছুটা ভালো। এটা তার নিজ এলাকা হওয়ায় এই এলাকায় তার কিছুটা প্রভাব রয়েছে। যারা নৌকার একনিষ্ঠ সমর্থক তারা শ. ম রেজাউল করিমকেই ভোট দেবেন। বিগত পাঁচ বছর মন্ত্রী থাকাকালীন এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। তারপরেও এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আউয়ালকে পরাজিত করে নৌকার জয় ঘরে তুলে নেয়া রেজাউল করিমের জন্য কিছুটা কষ্টসাধ্য কাজ হবে।
পিরোজপুর-১ আসনটিতে তৃণমূল বিএনপির ইয়ার হোসেন রিপন (সোনালী আঁশ ) ও জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম (লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এদের কেউই সাবেক মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম ও আউয়ালের ধারে কাছেও টিকতে পারবেন না। এ আসনে প্রত্যাহার করা প্রার্থীরা হলো জাসদ (ইনু) সাইদুল ইসলাম ডালিম ও জাকের পার্টি মনোনীত ফরহাদ আহমেদ।
এই আসনের ভোটারদের মধ্যেও এবারে নির্বাচন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। শ.ম রেজাউল করিম ও এ. কে. এম. আউয়াল সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের শেষ নেই। সদরের বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, এই আসনে জামায়াত একটি ফ্যাক্টর। জামায়াত এবং বিএনপি মিলে অতীতে এ এলাকার স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে জিম্মি করে রেখেছিলো। ওই অবস্থায় এ. কে. এম. আউয়াল আওয়ামী লীগের কান্ডারী হিসেবে পিরোজপুরের মাটিতে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। বিএনপির জামাতকে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। পিরোজপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার বিশাল অবদান রয়েছে। তিনি একজন ত্যাগী নেতা হওয়ায় পিরোজপুরের মানুষ এবার ঈগল প্রতীকের আউয়ালকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে। পিরোজপুরে রাজনীতিতে রেজাউল করিমের কোন অবদান ও অস্তিত্ব নেই।
শাজাহান মিয়া নামের এক ভোটার জানাল, গত পাঁচ বছরে শ.ম রেজাউল করিম মন্ত্রী থাকাকালে এলাকার রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়েছেন। এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছে। এলাকার মানুষকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। এসব কর্মকান্ডের কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা রেজাউল করিমের হাতে তুলে দিয়েছেন। পিরোজপুরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকরা তাই নৌকাতেই ভোট দেবে। আউয়াল এমপি থাকাকালে পিরোজপুরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। পিরোজপুরের মানুষ তা ভুলে যায়নি। শান্তি প্রিয় মানুষ কখনোই আউয়ালকে ভোট দেবে না।
পিরোজপুর-২:
পিরোজপুরের তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে পিরোজপুর-২ আসনে এবার সবার নজর রয়েছে। ভান্ডারিয়া-কাউখালী-নেছারাবাদ এই তিনটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর-২ সংসদীয় আসন। এই আসনে নৌকার প্রার্থী জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ঈগল প্রতীকের শক্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে। এই আসনটি আওয়ামী লীগ মহাজোটকে দিয়েছে। এই আসনে জাতীয় পার্টিকে (মঞ্জু) আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলেও তার ঘাড়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ কারণে এই আসনটিতে হাতটা হাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বরাবরই পিরোজপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ইতিপূর্বে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু নিজ এলাকা নয়, পুরো দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে তিনি ব্যাপক অবদান রেখেছেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সব সময় যোগাযোগ রয়েছে। নিজ সংসদীয় আসনের মানুষদের সুবিধা অসুবিধায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এই এলাকার মানুষের সুখ দুঃখে পাশে থাকেন। শেখ পরিবারের সঙ্গেও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পারিবারিক সুসম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনা এই আসনে নৌকার জন্য প্রার্থী দিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট কানাই লাল বিশ্বাসকে। কিন্তু পরবর্তীতে আনারসের মঞ্জুকে নৌকা প্রতীক দিয়ে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। কানাই লাল বিশ্বাস শেখ হাসিনার নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। সেই হিসেবে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর প্রতি শেখ হাসিনার সুনজর রয়েছে। বরিশালের নির্বাচনী মহসমাবেশে বক্তৃতাকালে নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জন্য ভোট চেয়েছেন। কিন্তু তারপরেও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্বস্তি নেই।
নেছারাবাদ উপজেলার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে শক্ত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। তবে আশা করা যায় শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নৌকা মার্কার জয় হবে। ভোটাররা এবারও নৌকার পক্ষেই থাকবেন। নির্বাচনী মাঠ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মহিউদ্দিন মহারাজ অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করছেন। গ্রামের সাধারণ প্রচার কাজেও লাখ লাখ টাকা খরচ করছেন। মহিউদ্দিন মহারাজের তুলনায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর প্রচার – প্রচারনা কিছুটা কম। মঞ্জুর স্ত্রী তাসমিমা হোসেন নিজে স্বরূপকাঠি এসে স্বামীর জন্য নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে গেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনে আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন মহারাজের বেশ কিছু সমর্থক ও ভোট ব্যাংক রয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। করোনা মহামারীর সময় মহিউদ্দিন মহারাজ এই এলাকার মানুষকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে মহারাজ স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। জনপ্রিয়তা আছে বলেই মহিউদ্দিন মহারাজ আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো নেতার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী ময়দানে আমার সাহস পেয়েছেন। ফলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সহজেই জয় ঘরে তুলতে শক্ত প্রতিরোধে সম্মুখীন হবেন।
এই আসনে নৌকা ও ঈগল প্রতীক এছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তরিকত ফেডারেশনের (ফুলের মালা) প্রতীকের মোহাম্মদ জাকির হোসেন, গণফ্রন্টের (মাছ) প্রতীকের মাহতাব উদ্দিন মাহমুদ, সুপ্রিম পার্টির (একতারা) প্রতীকে মিজানুর রহমান, এনপিপির (আম) প্রতীকের আবুল বাশার ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) প্রতীকের ছগির মিয়া। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা এবং ঈগলের মধ্যেই হবে এটা নিশ্চিত। অন্য প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
পিরোজপুর-৩:
শুধুমাত্র মঠবাড়িয়া উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর-৩ আসনটি গঠিত হয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এই সংসদীয় আসনটিতে নৌকা প্রতীকের কোন প্রার্থী নেই। ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিগত সময়ের একাধিক বারের সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী। তার বিপক্ষে কোন শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় তার জয় মোটামুটি নিশ্চিত বলেই ধরে নেয়া যায়। তার হাত ধরেই পিরোজপুর-৩ নির্বাচনী এলাকার আকাশে ঈগল উড়বে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডা.মো. রুস্তুম আলী ফরাজী জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
এলাকার মানুষের সঙ্গেও রুস্তম আলী ফরাজীর যোগাযোগ ও সম্পর্ক ভালো। তিনি বিগত সময়ে মঠবাড়িয়াবাসীর জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। গত নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করার পর কিছু দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ নেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও রাস্তাঘাটে ‘সরকারি যেকোনো কাজের জন্য ঘুষ দেয়া-নেয়া চলবে না’ লেখা স্টিকার লাগিয়ে দেন। স্টিকারের একপাশে রুস্তম আলী ফরাজীর ছবিও দেয়া হয়। তার এই উদ্যোগ এলাকাবাসীর কাছে বেশ প্রশংসনীয় হয়। এলাকাবাসী রুস্তুম আলী ফরাজীকে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য স্বাগত জানায়। স্টিকারের নিচে তাঁর মোবাইল নম্বর ও পরিচয় লিখে দেয়া হয়। এই স্টিকার দেখার পর অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেকেই তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। মঠবাড়িয়ার সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের কাছে রুস্তুম আলী ফরাজীর এই উদ্যোগ প্রশংসিত হয় এবং জনপ্রিয়তা পায়।
মঠবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, রুস্তুম আলী উচ্চশিক্ষিত ও চরিত্রবান মানুষ। ঘুষ দুর্নীতির সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। এ কারণেই মঠবাড়িয়া এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি যখন যে দল থেকে দাঁড়ান স্থানীয় জনগণ তাকে ভোট দিয়ে যায়। এখানে তিনি বারবার নির্বাচিত হন। এবারও তিনি নিশ্চিত বিজয় অর্জন করবেন। তার বিপক্ষে কোনো শক্তিশালী প্রার্থী নেই।
স্থানীয় ভোটার জামাল হোসেন জানান, এলাকার মানুষ একচেটিয়া হবে রুস্তুম আলী ফরাজীকে ভোট দেবে। এখানে মার্কা কোন ফ্যাক্টর না। রুস্তম আলী ফরাজী নামটি মঠবাড়িয়া এলাকায় খুব জনপ্রিয়। বিএনপি, জাতীয় পার্টির ও আওয়ামী লীগ – এই সব আমলেই তিনি জনগণের ভোটের নির্বাচিত হয়েছেন, এবারও তিনি নির্বাচিত হবেন।
এই আসনে মোট ১০ জন বৈধ প্রার্থীর মধ্যে এখন ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুজন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন মো. আমির হোসেন (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), মো. শামীম শাহনেওয়াজ (স্বতন্ত্র), মো. মাশরেকুল আজম রবি (জাপা), মো. জাসেম মিয়া (মুক্তিজোট), হোসাইন মোশারেফ সাকু (বাংলাদেশ কংগ্রেস) ও মো. শহিদুল ইসলাম (বাংলাদেশ কল্যাণ পাটি)।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও সুন্দরভোর অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। পোলিং এজেন্ট প্রিজাইডিং অফিসার সহ বিভিন্ন শ্রেণি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় সভা করা হচ্ছে। প্রার্থীদের আচরণ বিধি নজরদারিতে এলাকা জুড়ে তৎপর রয়েছে পরিদর্শক ও ভ্রাম্যমান আদালত। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর রয়েছে পুলিশ সহ আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।