ঝালকাঠি প্রতিনিধি : যেখানেই আমনের আবাদ, সেখানেই সবুজের চাদরে যেন আবৃত রয়েছে দিগন্ত জোড়া সেই মাঠ। সবুজ ছায়া ঘেরা মাঠের দিকে পড়ন্ত বিকেলে তাকালে দৃষ্টি ও মন জুড়িয়ে যায়। রোপিত আমন বীজে মাজরা পোকায় আক্রমণ করলে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তা ধুয়ে নেমে পরিস্কার হয়ে যায়। বৃষ্টি আমন ফসলের জন্য আশিবার্দ বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা। এবছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আমনের আবাদ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কৃষি বিভাগ।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুন বলেন, ঝালকাঠি জেলায় এবছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৪৭হাজার ২শত হেক্টর জমি। আমনের আবাদ অর্জন হয়েছে ৪৭হাজার ২শত ৫৫হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৫৫ হেক্টর জমিতে বাড়তি আমনের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে একলাখ দশ হাজার ৬৪৮ মেট্রিকটন। ঝালকাঠি জেলায় প্রধানত স্থানীয় জাতের সাদা মোটা ১০হাজার ১৩৪হেক্টর, লাল মোটা তিন হাজার পাঁচশত বিরানব্বই হেক্টর, মৌলতা তিন হাজার আটশত নয় হেক্টর, দুধ কলম দুই হাজার একশত আটানব্বই হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এছাড়াই উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের বিআর ১১, বিআর ২৩, ব্রি ৪১, ব্রি ৪৪, ব্রি ৫২, ব্রি ৫৭, বি ৭৭ জাতের আবাদ হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি জেলায় আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭হাজার ২শত হেক্টর এবং অর্জন হয়েছে ৪৭হাজার ২শত ৫৫হেক্টর জমি। এবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে একলাখ দশ হাজার ৬৪৮ মেট্রিকটন। ঝালকাঠি জেলায় প্রধানত স্থানীয় জাতের সাদা মোটা, লাল মোটা, মৌলতা, দুধ কলম চাষ হয়েছে। এছাড়াও উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের বিআর ১১, বিআর ২৩, ব্রি ৪১, ব্রি ৪৪, ব্রি ৫২, ব্রি ৫৭, বি ৭৭ জাতের আবাদ হয়েছে।
বীজ মাজরা পোকায় আক্রমণ করলেও কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তা পানিতে ধুয়ে নেমে গেছে।এবছর আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি। ধান ক্ষেতের কথা ভাবলেই চোখের পর্দায় ধরা দেয় দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। ঝির ঝিরে বাতাসে সবুজের ঢেউ খেলানো সে দৃশ্যে মুগ্ধ হয় সবাই। কৃষকের আগামীর সোনালী স্বপ্ন লুকিয়ে আছে সবুজ ধান ক্ষেতে। চারিদিকে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। শরতের রোদ-বৃষ্টির খেলায় সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। ফসলের মাঠের কোথাও ফাঁকা নেই, যতদূর দৃষ্টি পড়ে সবুজ আর সবুজ, নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা, আবার কখনো কালো মেঘ ধারণ করে বয়ে যায় এক পসলা বৃষ্টি। শেষ বিকেলে রং ধনুতে যেন সবুজের গাঢ় রঙ্গে একাকার হয়ে পড়ে।
মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজপাতা, আর আনন্দে দুলছে কৃষকদের মন। কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। সবুজ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। নতুন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন লাগাতে কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝিতে আমন ধান চাষ করার নিয়ম থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় তা পারেননি কৃষকরা। ধান রোপন নিয়ে কৃষক পড়ে বিপাকে। দেরীতে বৃষ্টি হলেও ইতিমধ্যে আমন রোপন লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ সম্পন্ন হয়ে বাড়তি অর্জনও সম্ভব হয়েছে। এবারও রোপা আমনের বাম্পার ফলন হবে বলে কৃষকরা আশা করছেন।
সরেজমিনে ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেত প্রকৃতির খেয়ালে গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করেছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধানগাছ ভাল রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা ক্ষেতের ঘাস পরিষ্কার, সার ও বালাইনাশক ঔষধ প্রয়োগ ও পার্চিংসহ সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন। মাঝে মধ্যে হচ্ছে বৃষ্টি, আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। তাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কৃষকরা।
ধানের চারাগুলো থেকে কয়েকদিন পর বের হবে থোর। আর কিছুদিন পরই কৃষকদের আমন ক্ষেতে বের হবে মৌ মৌ গন্ধ। এর পরই সকলের নজর কাড়বে সোনালি ধান। সোনালী স্বপ্নে সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা। গৃহিণীর মুখে ফুটবে হাঁসি।
কৃষক ইউনুছ ফকির বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় প্রথমদিকেই শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দিয়ে আমন চারা রোপণ করেছি। এতে রোপণে খরচ বেড়েছে। চিন্তা হচ্ছে ধানের খরচ উঠাতে পারবো কিনা।
আরেক কৃষক জহির সরদার বলেন, এবার তীব্র খড়ার কারনে দেরীতে রোপা আমন লাগাইছি। কিন্তু আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া ভালো থাহায় ফসল এহন অনেক ভালো অইছে।
কৃষক ফাইজ উদ্দিন বলেন, কয়েকদিনেই আমরার ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর অইছে। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ দেহা যায়।