## চাকরি ও পদোন্নতিতে অনিয়মের পর আলোচনায় এলো পোষ্য কোট
## ববি রেজিস্ট্রার বললেন, পোষ্য কোটায় ভর্তি একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত
বরিশাল প্রতিনিধি ॥
নিয়ম ভেঙে চাকরিতে প্রবেশের পর আলোচনায় এসেছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান স্টোর অফিসার মাহমুদুল হাসান। এরপর একইভাবে পদোন্নতি নিয়েও আলোচনার জন্ম দেন তিনি।
এবার নিজের সন্তানকে পোষ্য কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন এই কর্মকর্তা। একের পর এক অনিয়মের মাধ্যমে আলোচনায় আসলেও স্টোর অফিসার মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যারয় কর্তৃপক্ষ। বরং দায় সারা বক্তব্য দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ কিংবা ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের কোথাও ‘পোষ্য কোটার’ বিধান নেই। অথচ সেই নিয়ম ভেঙেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির স্টোর অফিসার মাহমুদুল হাসান।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘পোষ্য কোটার’ সুবিধা নিয়ে তিনি তাঁর ছেলে ওমর ফারুক ফয়সালকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি করেছেন “বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে”। অথচ ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ফয়সালের অবস্থান ছিল ৯ হাজার ৭৩৯তম।
অভিযোগ রয়েছে, স্টোর অফিসার ছাড়াও গত সেপ্টেম্বরের গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ৩২ হাজার তম অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও পোষ্য কোটার সুবিধায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমের মেয়ে ফাতেমা তৌফিক এবং ইলেকট্রিশিয়ান আরিফ হোসেন সুমনের ছেলে।
এদের মধ্যে উপাচার্যের মেয়ের প্রাপ্ত নম্বর ৩৯ দশমিক ৫০ এবং অপরজনের নম্বর ৫৩ দশমিক ৫০। পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া তিনজনই জীববিজ্ঞান অনুষদে সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে উপাচার্যের মেয়ে প্রথমে বিজ্ঞান অনুষদের একটি বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীতে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে জীববিজ্ঞান অনুষদে স্থানান্তরিত হন। অথচ চলতি বছর ওই অনুষদে সর্বোচ্চ ৫০৩৫তম মেধাক্রম পর্যন্ত ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে কোটার সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা অনিয়মের কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর অফিসার মাহমুদুল হাসানের চাকরিতে প্রবেশ নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। ২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দৈনিক “ইত্তেফাক”-এ প্রকাশিত এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির আবেদন করেন মাহমুদুল হাসান। একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ওই পদে যোগ দেন। তখন তার বয়স ছিল ৩২ বছর ৭ মাস, যা সরকারি চাকরির নির্ধারিত বয়সসীমার ওপরে। কিন্তু বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায় মাহমুদুল হাসানের ক্ষেত্রে।
তাছাড়া চাকরিতে যোগদানের মাত্র সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই, অর্থাৎ পর্যবেক্ষণাধীন অবস্থাতেই স্টোর কিপার পদে আবেদন করেন তিনি। অথচ তৎকালীন প্রশাসনিক পরিপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল- তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা ভিন্ন পদে আবেদন করতে চাইলে অন্তত এক বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেই নিয়মও উপেক্ষেতি হয়েছে মাহামুদুল হাসানের ক্ষেত্রে। নিয়ম ভেঙে তাকে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয় এবং প্রশাসনের গোপন অনুমোদনের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ২৭ জুন স্টোর কিপার পদে যোগদান করেন তিনি।
সূত্র জানিয়েছে, বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত পদে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। সেখানে পদোন্নতি পাওয়া মাহমুদুল হাসানের কোনো স্টোর ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞতা ছিল না। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্যদের তদবিরে অভিজ্ঞতার ঘাটতি উপেক্ষা করে তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সেই সিন্ডিকেট সদস্য হলেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ।
তবে অভিযুক্ত মাহামুদুল হাসান- নিয়োগ থেকে ভর্তি পরীক্ষা সব কিছু নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে বলে দাবি করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদকে নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়েছেন অকপটেই।
তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন অর রশিদ আমার শ্বশুর বাড়ির দিক থেকে দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হন। তবে আমার চাকরির ক্ষেত্রে তার অবদান নেই। আমি নিয়ম মেনেই সকল শর্ত পূরণ করে চাকরি পেয়েছি। তবে পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ম আছে বলেই ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। না থাকলে তো কর্তৃপক্ষ দিতো না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে এক ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান। সেসময় সাময়িকভাবে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি। তবে সাবেক সিন্ডিকেট সদস্যের সুপারিশে তিনি চাকরিতে পুনর্বহাল হন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে ওষুধ ব্যবসায় জড়িত তিনি। যা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি পরিপন্থি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তবে এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রক্টরের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। প্রক্টরকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মুহসীন উদ্দীন বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরির তিন মাসের মাথায় আবেদন করার সুযোগ নেই। তবে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিত পদ হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আবেদন করতে পারবে। সেটা একমাস হোক বা এক বছর হোক।
পোষ্য কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র ভর্তি সংক্রান্ত পোষ্য কোটার কথা বলা নেই। বলা আছে এটি একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিবে এবং একাডেমিক কাউন্সিলই এই বিধান তৈরি করবে। সেই বিধান অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভর্তির ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা আছে। তবে এটা গত বছর পূর্বের থেকে হ্রাস করা হয়েছে। আগে যা ছিল তার থেকে কমানো হয়েছে।