এইচ.এম. এ রাতুল: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশালে ইতিমধ্যে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। ভোটে অংশ নিতে এখনও আইনি লড়াই চলিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে ফের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়েছেন তিনি। এদিকে আগামী ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরিশাল সফরকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে সভা করেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতবৃন্দ।
সভা শেষে জেলা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদা) আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার বরিশালের সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটানো হবে। অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, মহানগর সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিমসহ অন্যান্য নেতারা। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী ২৯ ডিসেম্বর বরিশাল সফর করবেন। ওইদিন বিকেল ৩টায় বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
সভাশেষে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে আমরা ছিলাম অবহেলিত, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর সেই পদ্মাসেতু থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত কোথাও কোনো উন্নয়ন বাকি নেই। আর তাই এ অঞ্চলের জনগণ তাকে অভ্যর্থনা জানাবে এবং তার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
বরিশাল সদর আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, আজ আমরা বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করেছি। আগামী শনিবার বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাদের সঙ্গে বসে কীভাবে কি কার্যক্রম গ্রহণ করবো সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বরিশালে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এ সরকারের আমলে দক্ষিণাঞ্চলে কি কি উন্নয়ন হয়েছেন সে বিষয়ে যেমন তিনি বলবেন, তেমনি নৌকার প্রার্থীদের জনগণের সামনে পরিচয় করিয়ে দেবেন এটাই তার মুখ্য উদ্দেশ্য।
এদিকে প্রতীক বরাদ্দের পর যে গতিতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছিল তাতে যেন কিছুটা ভাটা পড়েছে। বুধবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে শুধুমাত্র মাইকিং আর সংক্ষিপ্ত গণসংযোগেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রচারণা। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন রিপনকেই প্রচারণার মাঠে সরব ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর দক্ষিণ সদর রোডের নির্বাচনী কার্যালয় চত্বর থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে একটি মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। মিছিলটি সদর রোডে গিয়ে শেষ হয়। পথিমধ্যে পথচারীদের সঙ্গে গণসংযোগ করে নৌকার লিফলেট বিতরণ করেন তারা। এ সময় বরিশালের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আবারও নৌকায় ভোট চান আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
তবে কখনও প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে, কখনও হারিয়ে আলোচনায় রয়েছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাওয়া বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সাদিকের অনুসারীরা বলছেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে পেতে নিয়মানুযায়ী যা যা প্রয়োজন তাই করবেন তারা।
আর নৌকার কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, উন্নয়নের কথা চিন্তা করে নৌকা প্রতীকেই আস্থা বরিশালবাসীর, সেক্ষেত্রে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। আর যারা দল করেন এবং আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন তারা নৌকার বাইরে অন্য কোনো চিন্তা করতে পারেন না। যদিও এখন পর্যন্ত প্রচারণার মাঠে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাদিক অনুসারীদের কাউকেই দেখা যায়নি, এমনকি হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকা কোনো নেতাকেও দেখা যাচ্ছে না প্রচারণায়।
এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছে জানতে চাইলে, তারা বরাবরই বলে আসছেন, নৌকা প্রতীক দলের হলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা যেহেতু নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দিতামূলক করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সুযোগ দিয়েছেন, তাই তারা সেটিকে কাজে লাগিয়েছেন। আর এ জন্য সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের পাশে রয়েছেন তারা।
অপরদিকে এ আসনে নৌকা প্রতীকের দপ্তর সেলের দপ্তর প্রধান অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার প্রার্থী দিয়েছেন। তাকে বিজয়ী করতে সবাই কাজ করছেন এবং করবেন। এখন কেউ যদি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাহলে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করব।
অপরদিকে নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন রিপন দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে বিজয়ী হবেন তিনি।
প্রার্থিতা পেতে চেম্বার আদালতে সাদিক আবদুল্লাহ:
বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে ফের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছেন। আবেদনে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়েছেন তিনি। বুধবার আবেদনের বিষয়টি সাদিক আবদুল্লাহর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এর ফলে তার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।